নিষিদ্ধ প্রেমের চক্রব্যূহ -লিংকন ভদ্র।।।।।
আজ যার কথা আপনাদের বলতে চলেছি,তার নাম শীর্ষেন্দু মল্ডল।সে তার মাতাপিতার একমাত্র আদরের পুত্র।ছেলেকে মানুষের মত মানুষ করার হেতু,
ছোটবেলা থেকেই তার মাতাপিতা তাদের একমাত্র পুত্রকে সামাজিক রীতিনীতি, ধর্মীয় সংস্কৃতি এবং সম্ভব্য আচরণবিধি সম্পর্কিত যাবতীয় বিষয়ে জ্ঞান প্রদান করে আসছেন।
যেমন ধরুন, বড়দের নমস্কার দেয়া,পাপকর্ম থেকে বিরত থাকা এবং নিয়মিত মন্দিরে গিয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা।বিশেষ করে অনাত্মীয় যুবতী মেয়েদের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা না বলা।আর কোনো মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানো তো মস্ত বড় পাপ।
তাই শীর্ষেন্দু সর্বদা তার পিতামতার দেওয়া বিদ্যা নিজের জীবনে বাস্তবায়নের জন্য তার সাধ্যমত সর্বোচ্চ চেষ্টা করেই যাচ্ছে নিরন্তর।
সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হওয়ার কারনে বাবার উপর থেকে কিছুটা হলেও আর্থিক চাপ কমানোর জন্যে সে ছাত্র পড়ানোর পরিকল্পনা করল।
আপনারা এটা সহজেই অনুমান করতে পারেন যে,
গ্রাম থেকে আগত মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরা সচরাচর কেমন হয়?
শহরের সংস্কৃতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে চলার চেষ্টা করে কিছুটা সফল হলেও তারা তাদের সহজাত বৈশিষ্ট্যাবলী থেকে সহজে বেরিয়ে আসতে পারে না।শীর্ষেন্দুর ভার্সিটি জীবনের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও,তার মধ্যেও পরিবর্তনের মাত্রা খুবই নগণ্য।
তবে একথা নিশ্চিত যে, কিছুটা সময় নিলেও বেশিরভাগ ছেলে স্রোতের মূলধারায় চলে আসতে বাধ্য।
এখনো বন্ধু-বান্ধবদের সাথে আড্ডায় যখন প্রেম সংক্রান্ত বিষয়ে কথা উঠে,তখন শীর্ষেন্দু এটিকে কৌশলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।এমনকি,কোন বন্ধু যদি ক্লাসের কোন সুন্দরী মেয়েকে শীর্ষেন্দুর সাথে জড়িয়ে মিথ্যে প্রেমের গুজব ছড়িয়ে আড্ডায় সাময়িক রস বাড়ানোর চেষ্টা করে,তখনও সে লজ্জায় যেন চুপসে যায়।
২০ই জানুয়ারী ২০১৮,
আজ পরিচিত এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে শীর্ষেন্দু একটা ভাল টিউশন পেল।নবম শ্রেণীর একটি মেয়েকে ইংরেজি পড়াতে হবে।
পূর্বনির্ধারিত সময়ে সে ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হল।
ছাত্রীর পিতা-মাতার সাথে তার দুই-এক কথা হওয়ার পর তারা তাদের মেয়েকে শীর্ষেন্দুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
ছাত্রীর মা শীর্ষেন্দুকে দেখিয়ে মেয়ের উদ্দেশ্য বলল,
মা প্রমা।
উনি তোমার নতুন শিক্ষক। তোমাকে ইংরেজি পড়াবেন।উনার সাথে বেয়াদবি করিও না।
প্রমা বাধ্য মেয়ের মত উত্তর দিল:আচ্ছা ঠিক আছে, মা।
ছাত্রী-শিক্ষকের কুশল বিনিময় হওয়ার পর প্রমা বলল,স্যার আমার পড়ার রুমে আসেন।
প্রমার বয়স ১৫। তার মধ্যে নবযৌবনের আভার উপস্থিতি স্পষ্ট।
এই বয়সে যৌবনের কলি থেকে পাপড়িসমূহ একে একে বের হয়ে এসে পূর্ণ ফুলে রুপান্তর হওয়ার প্রক্রিয়া চলতে থাকে। আপনি যদি পবিত্র দৃষ্টিতে খেয়াল করেন, তাহলে বুঝতে পারবেন। স্বয়ং ঈশ্বর যেন প্রকৃতির সমস্থ সৌন্দর্য কিছু কালের জন্যে তাদের দান করেন।তাদের কৌতুহলী মন, চাঞ্চল্য আর বিশেষ করে তাদের মুখের নিষ্পাপ হাসি আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
গায়ের ফর্সা রংয়ের পাশাপাশি গোছালো কাল চুল এবং সাথে কপালের লাল টিপটিতে ওকে কুমারী পূজার দেবীর ন্যায় লাগছে, দূর্গাপূজায় যাকে কেউ প্রণাম করতে দ্বিধাবোধ করে না।
সেই যাই হোক, শীর্ষেন্দু এত কিছু ভাবতে চায় না।
সে শিক্ষক মানুষ। তার কাজ পড়ানো এবং সে সেদিকেই মনোনিবেশ করতে চায়।
শীর্ষেন্দু প্রমার পড়ার রুমে প্রবেশ করল।
শুরুতে সে একটু অস্বস্তিবোধ করছিল।কারন জীবনে এই প্রথম সে কোনো উঠতি বয়সের এক যুবতী মেয়েকে পড়াবে।
শীর্ষেন্দু প্রমার সাথে কিছু সময় কথা বলে এটা বুঝতে পারল যে, প্রমা বেশি পড়তে চায় না।
তাই শীর্ষেন্দু বেশি-বেশি পড়িয়ে নিজের নব্য টিউশনিটা হারাতে চায় না।
কারন সে বুঝতে পেরেছে যে, কম পড়ালেও বেতনের উপর এর কোন প্রভাব পড়বে না।কারন,
এদের বাড়িতে কেউ কারো খবর রাখে না।সবাই যার যার নিজ কর্ম নিয়েই ব্যস্ত। যেন এক যান্ত্রিক জীবন।
পড়ার ফাঁকে ফাঁকে অনেক কিছু নিয়ে প্রমার সাথে শীর্ষেন্দুর কথা হয়।
ভার্সিটির হল এর ছেলেরা কিভাবে জীবন অতিবাহিত করে?
কি কি খায়?
কোথায় ঘুমায়?
এত ছাত্র একসাথে থাকে কি করে?
পড়াশোনার চেয়ে প্রমা গল্প করতেই বেশি পছন্দ করে।
সবমিলিয়ে ছাত্রী-শিক্ষকের মধ্য এখন ভালই সম্পর্ক হয়ে গেল।
একদিন কথাপ্রসঙ্গে প্রমা শীর্ষেন্দু কে একটি অদ্ভুত প্রশ্ন করল।
স্যার, আপনি প্রেম করেন না?
এই অপ্রত্যাশিত প্রশ্ন শুনে শীর্ষেন্দু তো পুরাই অবাক। সে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল।কারন কোনো মেয়ের কাছে এরকম প্রশ্ন সে এই প্রথমবার শুনল।
এদিকে উত্তর দিতে তার ভীষণ ভয় হচ্ছে।মনে মনে ভেবে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করল,,
প্রমা আমার সাথে প্রেম করতে চায় নাকি?
এরকমটা হলে তো মহা মুশকিল। একদিকে ওর পরিবার জানতে পারলে আমার টিউশন টা তো যাবেই এবং সাথে সাথে যাবে আমার সম্মান।আর আমি একজন শিক্ষক হয়ে কোনো এক বাচ্চা মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পুরো শিক্ষকসমাজকে অপমান করতে পারি না।
এমনও তো হতে পারে,
বাচ্চা মেয়ে, বয়স কম, কৌতুহলবসত এই প্রশ্ন করেছে।সেরকমটা হলে উত্তর দিতে তো আর সমস্যা নাই।
সবদিক বিবেচনা করে শীর্ষেন্দু উত্তর দিল:না।
তুমি ছোট মানুষ এসব বিষয়ে আলাপ করা উচিত নয়।
শীর্ষেন্দুর এমন উত্তর শুনে প্রমা বিজ্ঞের ন্যায় হাসতে লাগল।
কিছুক্ষণ হাসার পর বলল: কি যে বলেন স্যার! ভার্সিটিতে পড়ে এই বয়সে যদি প্রেম না করেন, তবে কবে করবেন?
এই সময় কি আর ফিরে পাবেন?
মানুষ হিসেবে যতটুকু সম্ভব সব ধরনের স্বাদ গ্রহন করা উচিত নয় কি?
আপনি কি জানেন এই বয়সেই আমার বেশ কয়েকজন প্রেমিক আছে। আপনার জায়গায় যদি আমি থাকতাম তাহলে কত কি যে করতাম।
শীর্ষেন্দু এসব কথা শুনার পর,ওর কথায় খুব একটা গুরুত্ব দিল না বরং শেষের কথাটি শুনে একটু আস্বস্ত হল যে, প্রমার অন্তত তার সাথে প্রেম করার কোনো অভিপ্রায় নাই।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি ২০১৮,
শীর্ষেন্দু সন্ধায় প্রমাকে পড়াতে গেল।
প্রমা এসে দরজা খোলে দিয়ে বলল,
স্যার আজ আমার বাবা-মা কাজের মেয়েটিকে নিয়ে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছে।তাই আপনি আমার পড়ার রুমে গিয়ে বসুন আমি আপনার জন্যে নাস্তা নিয়ে আসছি।
শীর্ষেন্দুর মনে হচ্ছে প্রমা ছাড়া বাসায় আর কেউ নেই।সে যাই হোক তার কাজ পড়ানো,কে বাড়িতে আছে?
কে নেই?
সেসব নিয়ে তার ভাববার কি দরকার?
এমনিতেই প্রমার পরিবারের অন্য কারো সাথে তার খুব একটা কথাবার্তা হয় না।কারন আগেই বলেছিলাম উনারা নিজেদের কাজ নিয়ে এতই ব্যস্ত যে,অন্য কারো সাথে গল্প করার সময় নেই। পরিবারের সবাই মিলে অর্থের দিকে ধাবিত হলে যেমনটা হয় আরকি।
শীর্ষেন্দু কোনো কিছু না ভেবে সরাসরি প্রমার পড়ার রুমে প্রবেশ করল।প্রবেশ করার পর যে বিড়ম্বনায় সে পড়ল, তা প্রত্যাশিত ছিলনা।সে দেখতে পেল একজন অসম্ভব সুন্দরী মহিলাকে যে কিনা অপ্রস্তুত অবস্থায় শুয়ে আছে বিছানায়।
তার আকস্মিক প্রবেশের কারনে উনি তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে নিজের কাপড় ঠিক করতে লাগলেন।
এদিকে এই অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে পড়ে শীর্ষেন্দু ভীষণ লজ্জা পেল।
শীর্ষেন্দু অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
শীর্ষেন্দু অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
ম্যাম, আমি সত্যিই অনেক দুঃখিত। আমি আসলে বুঝতে পারি নি। আমার উচিত ছিল দরজায় টুকা দিয়ে একটু অপেক্ষা করার পর রুমে প্রবেশ করা।
সুন্দরী মহিলাটি স্বাভাবিকভাবে উত্তর দিলেন,আরে জনাব এতে আপনার কোনো দোষ নেই।আর দুঃখিত হওয়ার মত তেমন কিছুই তো ঘটেনি।
নীল রংয়ের শাড়ীর পাশাপাশি কপালের রক্তিম ছোট টিপ এবং অগোছালো খোলা চুলে দারুন লাগছিল উনাকে।এ যেন মরুভুমির মাঝাখানে এক বিশাল নীলনদ।যে নদীতে সাতাঁর কাটতে মন চাইবে না এমন মানুষ খোঁজে পাওয়া ভার। সে যেন চাঁদের ন্যায় আকর্ষন করে যার প্রভাবে জোয়ার-ভাটা হতে বাধ্য।আর এই জোয়ারে যেকোন মানুষ ভেসে যেতে চাইবে, না ফেরার ভয়কে তুচ্ছ জ্ঞান করে।
শীর্ষেন্দুর শরীরে এই প্রথম যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল।
তখনি প্রমা রুমে প্রবেশ করল এবং বলল:স্যার উনি আমার বড় ভাইয়ের বউ।আমার ভাই গত মাসে ৫ বছরের জন্যে অমেরিকায় গিয়েছেন।
শীর্ষেন্দু:নমস্কার বউদি।
বউদি:নমস্কার জনাব।
আপনিই সেই, প্রেমকে ভয় পাওয়া শিক্ষক।তাই না?
শীর্ষেন্দু বুঝতে পারল,
প্রমা তার সম্পর্কে তার বউদিকে সব বলে দিয়েছে।
বউদি:আর শুনুন আমাকে বউদি বলার দরকার নেই,শুনতে ভাল লাগে না।
আমার নাম, প্রমিলা, কেউ বউদি ডাকলে নিজেকে বয়স্ক মনে হয়,,আপনিই বলুন না,আমাকে কি বয়স্ক মনে হয়?,বয়স তো সবে ১৮।
একথা বলেই উনি হাসতে লাগলেন,ঈঁদুরের মত দন্তের হাসিতে যেন মুক্তা জড়ে পড়ছে।যার রানী হবে এই রমনী সে তো চির ভাগ্যবান।সামান্য কারনে-অকারনে হাসা মেয়েদের সহজাত বৈশিষ্ট,যা তাদেরকে করেছে আরও প্রাণবন্ত।
এদিকে প্রমা বলল আপনারা আলাপ করেন। আমি একটু খেলা করে আসি।
শীর্ষেন্দু: কেমন আছেন, প্রমিলা দেবী।
প্রমিলা:প্রথম দিনই এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেওয়া বড় কঠিন।
শীর্ষেন্দু:কবে দিবেন?
প্রমিলা:কয়েকদিন কথা হলে এমনিতেই বুঝে যাবেন।
শীর্ষেন্দু: কি করে সম্ভব?
আপনি অন্যের বউ। প্রতিদিন কথা বললে পরিবারের বাকি সদস্যরা ব্যাপারটা ভালভাবে নিবে না।
প্রমিলা:আরে জনাব এই পরিবারের কারো অন্যের ব্যাক্তিগত ব্যাপারে নাক গলানোর অভ্যাস বা সময় কোনোটাই নেই।
শীর্ষেন্দু:সেটাই তো মনে হচ্ছে।আপনি তো তাহলে অনেক সুখী মানুষ।
প্রমিলা: আরে জনাব,শুধু টাকা আর স্বাধীনতা সবসময় সুখ আনয়ন করে না যদিনা কাছের মানুষদের কাছ থেকে সময় পাওয়া যায়।একটু হাসি-তামাশা,সবাই মিলেমিশে থাকা, সবাই সবার দুঃখগুলোকে ভাগ করে নিয়ে সুখ গুলোকে ছড়িয়ে দেওয়ার নামই সুখ।
শীর্ষেন্দু : সে যাই হোক, আমাকে নিয়ে তুমি যদি কোনো ধরনের অপ্রীতিকর প্রশ্নের সম্মূখীন হও, তখন কি উত্তর দিবে?
প্রমিলা:এই ক্ষুদ্র জীবনে কে কি বলবে সেসব নিয়ে পড়ে থাকলে জীবন পানসে হয়ে যায়।
আপনার কি মনে হয় আমার বর বিদেশে গিয়ে শুধু আমার কথা ভেবেই ৫ বছর কাটিয়ে দিবে।তেমনটা কিন্তু তিনি করবেন না।
তাহলে আমি কেন চাতকের ন্যায় অপেক্ষা করব, মাঝখান থেকে জীবন থেকে কিছু সুন্দর সময় নষ্ট হয়ে যাবে।
কেন জানি প্রমিলার সব কথা শীর্ষেন্দুর যুক্তিসংগত মনে হচ্ছে।
শীর্ষেন্দু : আপনার ভাবনায় কোনো ভুল নেই, বরং জীবনকে রঙিন করার মন্ত্র লোকায়িত।
এদিকে শীর্ষেন্দু কিন্তুু ঠিকই জানে,পরস্ত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানো হচ্ছে অভিমন্যুর ন্যায় বেরিয়ে আসার কৌশল না জেনে চক্রব্যূহে প্রবেশ করার মতই।
আজ কেনো জানি শীর্ষেন্দুর কাছে সব নিয়ম, সংস্কৃতি এবং সামাজিক প্রথাকে তুচ্ছ মনে হচ্ছে।এতদিন ধরে অবদমিত যৌবনরথ তার ধৈর্যের সীমানা অতিক্রম করেছে।
শীর্ষেন্দু আসলে প্রমিলাকে ভালবেসে ফেলেছে,যাই হোক না কেন, সে তাকে নিজের করে চায়।
প্রতিদিনই কোনো না কোনো বাহানায় তাদের কথা হয়।তারা কেউ কাউকে ভালবাসার কথা বলেনি। তবে এটা নিশ্চিত যে, তারা দুজন প্রেমের বেড়াজালে আটকা পড়েছে।
দুজন যেন দুজনারই।
আমার মনে হয়,
পরকীয়া প্রেমের মত আকর্ষন অন্য কোনো সাধারণ প্রেমে নেই।
এদিকে পরকীয়া প্রেম করা যে মস্ত বড় অপরাধ, সে কথা শীর্ষেন্দু বুঝেও, বুঝতে চাচ্ছে না। কারন যৌবনকালের এই সময়ের বৈশিষ্ট্য এমনই।
২৮ ই ফেব্রুয়ারি ২০১৮,
আজ হঠাৎ করে শীর্ষেন্দু কেন জানি অনেক ভয় পেয়ে গেল।সে নিজেই নিজেকে বলল,
আমি যে এই সম্পর্কে জড়ালাম, এর ভবিষৎ কি?
আমি তো উনাকে কখনো বিয়ে করতে পারব না।
আর যদি পারিও,তবে আমার পরিবার অসম্মানিত হবে।
সমাজে মুখ দেখাব কিভাবে?
আমার ছাত্রী এবং তার পরিবার কি ভাববে?
এখন যদি প্রমিলা আমাকে বিয়ে করার জন্যে চাপ দেয়,তাহলে কি করে তাকে বোঝাব ?
প্রেমে অন্ধ হয়ে মানুষ যে কোনো কিছু করতে পারে। কিন্তু বাস্তবিক অর্থে বেশিরভাগ সময় তা ক্ষতিকর হয়।
একথা যখন ভাবছিলাম,
ঠিক তখনি প্রমিলা আমার ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠাল।
সেটা ছিল নিম্নরূপ;
এই সাদাসিধে ভদ্র মাস্টার,
নিশ্চয় আমাকে নিয়ে ভাবছিলে।নবযৌবনের জোয়ারে প্রেমের শুরুতে কারোরই মাথা ঠিক থাকে না। তারা ভাবে আগে প্রেম করি, পরে দেখা যাবে কি হয়।
কিছু মানুষ সম্পর্ক স্থাপনের কিছুদিন পরেই বুঝতে পারে যে, সে যা করছে তা হয়তো ঠিক না বা সেটা তাকে ভবিষ্যতে পীড়া দিতে পারে এমনকি ম্লান করে দিতে পারে তার আত্মসম্মান। সে যাই হোক,আজ আমার স্বামী বাসায় ফিরে এসেছেন। আসলে তোমার সাথে ঘর করার স্বপ্ন আমার ছিল না। কয়েকটা অলস দিন তোমার সাথে আনন্দে কাটালাম। এতে কিন্তু কারো দোষ নেই।দয়া করে আমাকে আর ফোন করো না।বুঝতেই তো পারছ, স্বামী বাসায়।তুমি কল করলে উনি আমায় খারাপ ভাববেন।আমি কিন্তু তোমায় ঠকাই নি।এবং এমনটাও কখনো বলিনি যে, তোমায় ভালবাসি।তুমি যদি অন্য কিছু ভেবে থাক তাহলে সে ভাবনা ভুলে যাও।এতে দুজনেরই মঙ্গল।আর শুন,২-৩ দিন পর, প্রমা বিদেশ চলে যাবে। ওকে তোমার আর পড়াতে হবে না।
ইতি,
প্রমিলা বউদি।
এই চিঠি পড়ে শীর্ষেন্দু দীর্ঘশ্বাস নিয়ে হাঁপ ছেঁড়ে বাঁচল। তাজিংডং পাহাড়ের সমান ওজনের পাথরটা যেন তার বুক থেকে সরে গেছে।
প্রেমা দেশে থাকলেও তাকে আর পড়াতে যেত না শীর্ষেন্দু।
কারন কি করে সে প্রমিলার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে।
সে আবার আগের সেই বাবা মায়ের আলাবোলা ছেলের চরিত্রে ফিরে এসেছে।
No comments