Header Ads

নরক দর্শন -লিংকন ভদ্র



২৫ ই ফেব্রুআরি ২০১৮,
আমার নিকট এই দিনটা সত্যিই অনেক আনন্দের এবং গৌরবের।কারন, দীর্ঘ ৫ বছর গভেষণার পর আজ আমি একটি বিশেষ ঔষধ আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছি।ঔষধটির নাম ড্রিমেট। এর বিশেষত্ব হল,এটি সেবনের পর আপনি আপন ইচ্ছা অনুযায়ী, স্বপ্ন দেখতে পারবেন।ঔষধটি আজই প্রথমে আমার বন্ধু বিপ্লবের উপর পরীক্ষা করেছি।
ওর ঘুম ভাঙ্গার পর বলল, ঔষধটা সত্যিই ঠিকঠাক  কাজ করেছে। সে কি স্বপ্নে দেখেছে, সেটা আমায় বলেনি।
হয়ত তার আপন ইচ্ছা অনুযায়ী বিশেষ কোনো স্বপ্ন সে দেখেছে।আমিও জানার জন্য জোড় করিনি।
সে যাই হোক,
আপনাদের আমার একটি বিশেষ গুণ সম্পর্কে বলে নিই ,সেটা হল স্বপ্ন দেখা অবস্তায় আমি যে স্বপ্ন দেখছি, সে ব্যাপারটা অলৌকিকভাবে  বুঝতে পারি।

এবার নিজের উপর নিজরন তৈরি ঔষধটা পরীক্ষা করার পালা।
২৬ই ফেব্রুয়ারি ২০১৮,
আজ আমি অনেক চিন্তা-ভবনা করে ঠিক করলাম নরক দর্শন করব।যেখানে যেতে মানুষ সবচেয়ে বেশি ভয় পায়।
বিছানায় শুয়ার ২০ মিনিট পর অনুভব করলাম,সত্যিই যেন ভয়ংকর চেহারার অধিকারী প্রহরীদের সহিত নরকের দিকেই যাচ্ছি।
আমার একটি বিশেষ গুণেরর কথা আপনারা আগেই জেনেছেন।তাই আমি নরকে যেতে কোনো ধরনের ভয় পাচ্ছিনা।

নরক দর্শন! সেকি ভয়ংকর ব্যাপার, না দেখলে আপনি বুঝতে পারবেন না।চারিদিকে পাপীদের আর্তনাদের চিৎকার, আপনার হৃদয়কে কম্পিত করবেই।ফলে লোপ পাবে আপনার জ্ঞান এবং আপনাকে যে কোনো মূল্যেই তাড়িত করবে মুক্তির পথ সন্ধানের লক্ষ্যে।

প্রথমে আমাকে নরকের রাজা যমের দরবারে হাজির করা হল।
সেখানে আমার যাবতীয় পাপপুণ্যের চুল ছেড়া বিশ্লেষণের পর আমার জন্যে বরাদ্দ করা হল "ক্ষারকর্দম নরক"
জেনে রাখা ভাল, হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোতে ২৮ প্রকার নরকের কথা বলা হয়ে হয়েছে।এর মধ্যে "ক্ষারকর্দম নরক" ২২তম।
প্রশ্ন থাকতে পারে, কোন ধরনের পাপীরা এ নরকে যায়?
যে ব্যাক্তি মিথ্যে অহংকারের বশে অন্য এমন ব্যক্তিকে অসম্মান করে যে কিনা তার তুলনায় সাধনা, জ্ঞানে এবং আধ্যাত্মিক অবস্থানে অনেক বড়।

এই নরকে যমদূতেরা পাপীকে এমন ভাবে নিক্ষেপ করে যাতে সে যেন সরাসরি মাথায় আঘাত পায় এবং তারপর তারা পাপীর উপর অত্যাচার শুরু করে।
আমি মনে মনে ভেবে নিজের মনকে বোঝাতে সক্ষম হলাম, যমরাজ উত্তস বিচার করেছেন।
কারন আমার নিজের জীবদ্দশায় আমি সত্যিই অনেক জ্ঞানী-গুণী এবং সাধক ব্যাক্তিদের অনেক সমালোচনা করেছি।
আমি ভয়ে ভয়ে তখন যমরাজকে বললাম,আমার কিছু প্রশ্ন ছিল।অনুগ্রহ করে উত্তর দিবেন কি?
যমরাজ:বলেন, কি জানতে চান?
আমি:নরকে আমি কি মানুষ রূপে যাব?
যমরাজ:অবশ্যই। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ আছে কি?

আমি: একটু সন্দেহ হয় বটে। বলুনতো, আমার মাথায় যদি প্রচন্ড অাঘাত করা হয়, তখন তো আমি জ্ঞান হারাব।তার পর যদি আপনার সৈনিকরা আমার উপর অত্যাচার করে তাহলে আমি তো বুঝতেই পারব না।
অত্যাচার করেও তো শাস্তি দিতে ব্যর্থ হবেন আপনি।

যমরাজ:আপনি কি ভাবছেন, আপনাকে অজ্ঞান হতে দিব, আমরা?।অত্যাচার সহ্য করার জন্যে আপনাকে স্বজ্ঞানেই রাখা হবে সর্বদা।
আমি :এত কঠিন অত্যাচার সহ্য করার সামর্থ্য যদি আমাকে দান করা হয়, তাহলে আমি সাধারণ মানুষ কি করে হব।কারণ মানুষের সহ্যের সীমা আছে।

জমরাজ:আপনাকে শাস্তি দেওয়ার জন্যে,অনেক যন্ত্রনা সহ্য করে স্বজ্ঞানে থাকতে বাধ্য করা হবে।
দিবনা ঘুমাতে বা যন্ত্রনা থামানোর আদেশ বরং শাস্তির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকবে নিরন্তর।
আমি:তাহলে বুঝা যাচ্ছে আপনি আমাকে রোবটের ন্যায় শাস্তি গ্রহনের যোগ্য হিসেবে তৈরি করেই নরকে পাঠাবেন।তাহলে এখানে প্রকৃত পক্ষে আমি মানুষের শাস্তি হচ্ছে কোথায় বরং শাস্তি হচ্ছে আপনার তৈরি রোবটের।যার অধিক শাস্তি গ্রহনের সামর্থ্য নিহিত।
যমরাজ:আপনি তো ভারি বজ্জাত।এত বেশি বোঝেন কেন? এই কারনে আপনাকে আরও ভয়ানক নরকে পাঠানো হবে।

একথা শোনে আমি আসলে ভয় পেলাম না। কারন আমি জানি, আমি স্বপ্ন দেখছি। তবে মাঝে মাঝে ভয় পাওয়ার অভিনয় ঠিকই করছি।
আমি:আমার আরও কিছু প্রশ্ন ছিল।
যমরাজ:আমি ঈশ্বরের নির্দেশনায় সব কাজ করে থাকি।আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে উনাকে গিয়ে করেন।
আমি:উনাকে কোথায় পাব?

ঠিক তখনি জানালা দিয়ে আগত প্রভাতের রবির আলোতে আমার নিদ্রা ভঙ্গ হল।


No comments

Powered by Blogger.