Header Ads

অন্তহীন প্রেম -লিংকন ভদ্র


সে দিনটা ছিল ২রা জানুয়ারি ২০১০,সবে মাত্র টি খান উচ্চ বিদ্যালয় থেকে অষ্টম শ্রেণিতে পাস করে মারাদিঘি গোলাম হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হলাম।স্কুলটি আমার বাড়ি থেকে প্রায় ৩ মাইল দূরে অবস্থিত।রোজ পায়ে হেঁটেই স্কুলে যেতাম।প্রথম দিন ক্লাস শেষে বের হয়েই আমার দৃষ্টি আটকে যায় একটি মেয়ের পানে।তার কারণ হয়ত কারো অজানা নয়।বয়ঃসন্ধিকালের এই বিশেষ সময়ে ছেলে-মেয়েদের পরস্পরেরর মধ্য এক ধরনের অদ্ভুত ভাললাগা কাজ করে যা আসলে বলে বোঝানো সম্ভব নয়।ওর চন্দ্রের ন্যায় হাস্যোজ্জ্বল মুখ আর মায়াবী নেত্র পানে তাকিয়ে আমি যেন মহাশূন্যযান ছাড়াই মহাশূন্যে অনন্ত সুখে ভেসে বেড়াতে লাগলাম।আকস্মিক দেখায় প্রেমে পড়লে সবই যে সম্ভব সেটা সকল প্রেমিক প্রেমিকাদের অজানা নয়। কতক্ষণ যে তাকিয়ে ছিলাম সেটা বলতে পারব না।
ওকে প্রথমে আমি চিনতে না পারলেও, কিছু অনুসন্ধান করে ওর সম্পর্কে জানতে পেরেছিলাম।
মেয়েটির নাম প্রমিলা। প্রমিলার বাড়ি আমার পাশের গ্রামে হওয়া সত্ত্বেও সে কিন্তু ১ম-৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পূর্বধলা শহরে থেকে পড়াশোনা করেছে।তাই ওকে এর আগে কখনো দেখিনি।
আমি ওকে ভালবাসতাম কিনা সেকথা বলতে পারব না, তবে একটু বলতেই পারি,সে ছিল আমার স্বপ্নের রাণী আর ভাল থাকার কারণ।সে ছিল আমার হৃদয়ে লালিত পবিত্র ভাবনা, যা হয়ত কোনোদিনই ভোলার নয়।
একদমই ভাল ছাত্র ছিলাম না।পড়া না পাড়ার দরুন প্রায়ই স্কুলের শিক্ষকদের মার, অপমান সহ্য করতে হত।
আসল কথা হল, ওকে একনজর দেখব বলেই নিত্য মার খাওয়া সত্ত্বেও আমি বিশেষ কারন ছাড়া কোনোদিনই স্কুল কামাই করিনি। ওর বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটা আমার বাড়ির যাওয়ার রাস্তাটা অনেকটা প্রায় একই।প্রায়ই ওর সাথে হেঁটে যেতাম। যদিও প্রথম বেশ কিছুদিন কোনো ধরনের কথাই হয়নি ওর সাথে।
ওর সান্নিধ্য আমাকে অস্বাভাবিক করে তুলতো, এমনকি ইচ্ছা জাগাতো ওর সাথে নিরিবিলিতে মঙ্গল গ্রহে বসতি লাভের ভাসনা।
ওকে ভাললাগার ব্যাপারে আমার বন্ধু বিপ্লবকে বলেছিলাম।শুনেছি বিপ্লব নাকি প্রমিলাকে সব বলে দিয়েছে।
এরপর থেকে প্রমিলার সামনে আসতে আমার বড্ড লজ্জা করত। আমি এমনভাবে চলাফেরা করতাম যেন ভুলেও ওর সামনে যাতে না পরি।
হঠাৎ একদিন ছোট ভাই মিঠুর মারফত প্রমিলা আমাকে একটি চিঠি পাঠাল।
আমি ভয়ে ভয়ে চিঠিটা পড়তে শুরু করলাম।
চিঠিটা ছিল এরুপ..
প্রিয় লিংকন♥
তুমি যে আমাকে অনেক পছন্দ কর, সে কথা আমি জানি। তার মানে তো এই নয় যে, তুমি অপরাধী। আর শোন আমিও তোমাকে অপছন্দ করি না, বুঝলে।ভালবাসা কারে কয় তা না জানলেও তোমার আমার মধ্যকার বিশেষ ধরনের মাহাকর্ষীয় টানই যেন তার সত্যতা নিশ্চিত করে।
জানিনা আমাদের ভবিষ্যৎ কি হবে? কি হবে আমাদের ভালবাসার পরিণতি? তবে এটা বলতে পারি এ ভালবাসা কখনো শেষ হবার নয়। শত হোক প্রথম ভালবাসা তো যা কেউ চাইলেও ভুলতে পারবে না।
ইতি
তোমার প্রমিলা।♥
ওর চিঠি পড়ে অানন্দে আমার পাকাছাড়াই আকাশে উড়তে ইচ্ছে করছে, এমনকি বাতাসে ভেসে চলে যেতে ইচ্ছে করছে ওর কাছে।
পরদিন ক্লাসচলাকালীন ওকে চোখে ইশারা করে স্কুলের পাশের পার্কে যেতে বললাম।সে আমার ইশারা বুঝতে পেরে ঔই পার্কে উপস্থিত হল। যদিও ওর আসার আগেই আমি পার্কে এসে বসেছিলাম।আমি প্রথমে কেনো জানি ওর মুখপানে তাকাতে পারছিলাম না।অন্য দিকে তাকিয়েই ওকে পার্কের ব্যঞ্চে বসতে বললাম।
প্রমিলা বলল:এত লজ্জা পাচ্ছ কেন?
আমি ওর স্বাভাবিক কথাবার্তা শুনেই বুঝতে পারলাম, মেয়েদের অতিদ্রুত প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সত্যতা।
সে যাই হোক, সামাজের নানান প্রতিবন্ধকতার দরুন আজকাল আমাদের দেখাসাক্ষাৎ অতি গোপনেই করতে হত। বেশির ভাগ সময় চিঠির আদান-প্রদানই মনের কথা প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম ছিল।
এসএসসি পরীক্ষা দেয়া অবধি আমাদের সম্পর্ক ভালই চলছিল।
আগেই বলে দেই,যোগাযোগের জন্যে আমাদের কারো কাছেই কোন ধরনের ফোন ছিল না।এদিকে প্রমিলা
এসএসসি পাস করে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়তে ঢাকা শহরে চলে গিয়েছিল।আমি ভর্তি হয়েছিলাম নেত্রকোনা সরকারি কলেজে। মাস দুয়েক পর প্রমিলা ঢাকা থেকে গ্রামে এসেছিল। এখন যেন ও আরো বেশি সুন্দরী হয়ে গেছে। আমি তো অবাক, কে ও? প্রথমে তো ওকে চিনতেই পারিনি।তবে ব্যাপারটা ওকে বুঝতে দেইনি।
ওর সাথে দুদিন খুব বেড়ালাম, খাওয়া-দাওয়া করলাম, শেয়ার করলাম আমাদের সুখ দুঃখের কথা।শহর থেকে স্বর্গের অপ্সরীর ন্যায় প্রমিলার আগমন আমাকে এক ভিন্নধর্মী বার্তা দিয়ে গেল।
বার্তাটা আমি অনুমানের ভিত্তিতে গ্রহন করলাম যেটা ওর সুখ দুঃখের সাথে সম্পর্কিত।
আমি স্বয়ং মনে মনে ওর-আমার সম্পর্কের ব্যাপারটা একটু বাস্তবতা দিয়ে ভাবার চেষ্টা করলাম।
ভেবে দেখলাম আমি যেহেতু ওকে অনেক ভালবাসি,সেহেতু ওর সুখ দুঃখের ব্যাপারটা আমার ভাবা উচিত।আমার অনিশ্চিত জীবনে ওকে জড়ালে ওর সুখী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।ওর সর্বোচ্ছ সুখ আর সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে আমার ভুমিকা থাকা উচিত।কেন শুধু ওকে আমার অগোছালো এবং অনিশ্চিত জীবনে জড়াব।যে জীবনে টিকে থাকার লড়াই,ব্যর্থ হওয়ার অপার সম্ভবনা।
আজ ১২ই জুন ২০১২, প্রমিলা ঢাকা চলে যাবে।যাওয়ার আগে আমায় ও বলে গেল ওকে যেন আমি প্রতি ১৫ দিন পর পর কমপক্ষে একটি চিঠি লিখি। যদি তেমনটা না করি, ও আমার সাথে কোনোদিনই কথা বলবে না।
আমি বললাম ঠিক আছে।
এদিকে আমি মনস্থির করলাম ও যাতে আমাকে ভুলে যায়। তার জন্যে ও ঢাকা যাওয়ার পর ওকে আমি কোনো চিঠি লিখিনি।
প্রমিলা আমাকে বলেছিল, যদি ওকে আমি ১৫ দিন পর পর চিঠি না পাঠাই ও আমার সাথে কথা বলবে না। আর কেউ জানুক বা না জানুক আমি তো জানি ও কতটা জেদি মেয়ে।
হয়ত সেই জেদ আর অভিমান থেকেই ও আর কোনোদিন গ্রামে আসেনি। শুনেছি ও নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিঞ্জান অনুষদে পড়ে। কোন বিষয়ে পড়ে তা জানি না।
অনেক কষ্ঠে আমিও ঢা:বি: তে সুযোগ পেয়ে ভর্তি হলাম।
মন চাইলেও ওর মঙ্গলের হেতু প্রত্যক্ষভাবে ওকে খোঁজার চেষ্ঠা করিনি কোনোদিন ।
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বিশ্বভালবাসা দিবস। এই দিনে ঢাবি ক্যাম্পাসে হাজারো যুগলের সমাগম আমার হৃদয়কে প্রমিলার কথা ভাবতে প্রভাবিত করছে।সকাল ১০ ঘটিকার সময় একটা কাজে আমি ক্যাম্পাসে যাই।তখনি একটা পিচ্চি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল,, এবং বলল ভাইয়া একটা গোলাপ নেন না।এতোকরে বলাতে কোনো কাজে লাগবেনা জেনেও ওর কাছ থেকে একটা গোলাপ কিনে কলা ভবনের পাশ দিয়ে আসছিলাম। হঠাৎই এক রমনীর কন্ঠস্বরে আমি পেছনে ফিরে তাকালাম।এই কন্ঠস্বর যেন চিরচেনা।হাঁঠা থামিয়ে আস্তে করে মেয়েটির মুখপানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওকে চিনতে পারলাম।ও আগের থেকে একটু মোটা আর অনেক ফর্সা হয়ে গেছে। ওর দর্শনে আমার সমগ্র শরীরে যেন বসন্তের পবন প্রবাহিত হল।আমার হৃদয় অনুভব করছিল এক অপ্রকাশ্য অনাবিল আনন্দের ছোঁয়া।
কুশল বিনিময় করে।
গোলাপ ফুলটা ওকে দিয়ে, ভালবাসা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে চলে আসতে চাইলাম।
প্রমিলা বলল:শোন, তোমার সাথে কথা আছে।
আমি ভাবলাম ও হয়ত ওর প্রেমিককে নিয়ে এসেছে। তাই ওর কাছ থেকে সরে যেতে চাইলাম।কারন এখনো যে ওকে আমি ভুলতে পারিনি আর পারব বলেও মনে হয় না।
আসার সময় বলে আসলাম, যদি কথা বলতেই চাও অন্য কোনো দিন আমাকে ফেইসবুকে ম্যাসেজ দিও, আমার নাম লিখে খোঁজলেই হবে।
প্রমিলাও হয়ত ভাবল আমার প্রেমিকা আমার জন্যে অপেক্ষা করছে। তাই ও আমাকে চলে আসতে দিল। কিন্তু আমার দেওয়া লাল গোলাপটা কেন যেন রেখে দিল।
হলে আসতে আসতে আমার মনে কয়েকটি প্রশ্নের উদ্ভব হল,
প্রথমটি, প্রমিলা কি আজও আমায় আগের মত ভালবাসে?
ও কি আসলেই কারো সাথে প্রেম করে?
না অামার ধারনা ভুল?
ও কি সুখী হতে পেরেছে?
এসব প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য ওর সাথে আমার কথা বলতে হবে।

১৪ই ফেব্রুআরি ২০১৮,
ঔইদিনই প্রমিলার সাথে আমার শেষবারের মত কথা হয়েছিল।কোনো বিশেষ ভাবনায় ঔইদিন আমরা কথা বলতে পারি নি।
আজ ১৫ই মার্চ ২০১৮,
ঘড়িতে বাজে ১২:৩০,
প্রায় ৬ বছর পর প্রমিলা আমাকে প্রথমবারের মত ফেইসবুকে ম্যাসেজ দিয়ে জিজ্ঞাসা করল।
প্রমিলা:কেমন আছ???

আমি:বড়ই কঠিন প্রশ্ন করেছ তুমি, আমি এর সঠিক উত্তর দিতে পারব কিনা জানি না।

প্রমিলা:এ আবার কঠিন প্রশ্ন হলো কি করে?

আমি:এই প্রশ্নের কাঠিন্য তুমি হয়ত বুঝতে পারনি।তুমি প্রশ্ন কর তাকে, যে ভাল না থেকেও ক্রমাগত বলেই যাচ্ছে ভাল আছি।কারন মানুষ নিজে ভাল না থাকলেও, তার কাছের মানুষেদের সত্য বলে কষ্ট দিতে চায় না।এটাই মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা। আর আমি আজকাল আসলে বড়ই স্বার্থপর হয়ে গেছি।যেকোন উপায়ে ভাল থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি নিরন্তর।কারণ স্বল্পকালের মানবজীবন দুঃখে নিমজ্জিত থেকে কাটানোর কোনো মানে হয় না।

প্রমিলা:তার মানে বেশ ভালই আছ।
আমি:ঠিক সেরখমই।তুমি কেমন আছ???তুমিও কি আজকাল আগের মত চড়ুই পাখি ন্যায় চঞ্চল রয়েছ??

প্রমিলা:ভাল আছি কিনা, তা ঠিক জানি না।অভিমান আর প্রত্যাশায় দিনগুলা কেটে যাচ্ছে কোনোরকম ।
এখন আমি আর আগের মত নেই।এখন কেন যেন পাথরের ন্যায় হয়ে গেছি। নিজের মধ্যে পাকামো ভাবটা আমার চঞ্চল মনের দুর্নিবার গতিকে রোধ করেছে।
এখন কেন যেন আগের মত উদ্ভট চিন্তাগুলোও উদয় হয় না।
- তুমি এতদিন আমার সাথে যোগাযোগ করনি কেনো???
আমি:তোমার সুনিশ্চিত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণের নিমিত্তে আমার এই প্রয়াস। তুমি তো জানই,আমার অবস্থা খুব একটা ভাল নয়।আবেগের তাড়নায় তোমাকে যদি আমার অনিশ্চিত জীবন এর সাথে জড়িয়ে ফেলি,সেটা যে চরম ভুল হবে।নানান সমস্যায় তুমি যখন কষ্ঠ পাবে, ঠিক সে মুহূর্তেই তোমাকে জেনেশুনে চিতায় প্রবেশ করানোর দায়ে আত্মগ্লানি আমাকে দংশন করবে প্রতিনিয়ত। প্রথমে তোমার সাথে আমার অঘোষিত আকস্মিক বিচ্ছেদ আত্মঘাতী মনে হলেও অাস্তে আস্তে কিভাবে যেন আমি ঠিকই স্বাভাবিক হয়ে গেলাম।

প্রমিলা:তোমার মত ছেলেরা সব সময় নিজেদের ভাবনাকেই ঠিক মনে করে। তুমি হয়ত ভেবেছ, আমায় ত্যাগ করে, অামার জন্যে অন্য কোনো যোগ্য ছেলে পাওয়ার সম্ভাবনাকে বৃদ্ধি করে,আমার সর্বোচ্চ সুখ নিশ্চিত করে ফেলবে।
তোমার জানা দরকার যে, সুখ এমন এক জিনিস যা লাভ করার পন্তা ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন এবং কেউ কারো সুখ নিশ্চিত করতে পারেনা।
কিসে আমার সুখ। কিসে আমার আনন্দ। আর কি আমার প্রিয় বস্তু তা তো অন্য কারো জানার কথা নয়।

আমি:তুমি ঠিক বলেছ।কেনো জানি তোমাকে আমার জীবনে জড়াতে ভয় হচ্ছিল।তোমার হাসিমাখা মুখ যদি আমার দ্বারা দুঃখের চাদরে ঢেকে যায়।তাহলে আমি সত্যিই  সহ্য করতে পারব না।কোনো কারণে তোমার প্রতি তিরস্কার যাতে আমাদের ভালবাসা হ্রাসের কারণ না হয়,সে শংঙ্কা ছিল।ভয় ছিল তোমার নেত্রে পানি দেখার।কারণ তোমার নেত্রে বারি দর্শন আমার জন্যে নরক দর্শনের সমান হবে।

তুমিও তো নিজে থেকে আমাকে কোনো চিঠি দাওনি।

প্রমিলা:তোমার প্রতি আমার অভিমানের হেতু আমি তোমাকে কোনো চিঠি দেইনি।
এই হল সেই অভিমান, যার প্রতিদানে আমি আরও বেশি ভালবাসা প্রত্যাশা করেছিলাম।ভেবেছিলাম তুমি আমার অভিমান ভাঙ্গানোর চেষ্টা করতেই থাকবে আর আমি আরও বেশি অভিমান করতে থাকব। অভিমান যে ভালবাসা বৃদ্ধির এক মাধ্যম। তোমার সেটাও জানা দরকার যে,
রাগ, অভিমান কেবল তার উপরই করা যায়, যার উপর মানুষের অধিকার থাকে ।কারন অধিকারবিহীন অভিমান তার স্বকীয়তা হারায় এবং তেমন কিছু প্রদান করে না।
আমি:তোমার অভিমানের মূল্য দিতে আমি ব্যর্থ হয়েছি। ব্যর্থ হয়েছি নিজের মনের সাথে যুদ্ধে। ব্যর্থ হয়েছি নিজের ভাগ্যের কাছে। আমি সত্যিই বিশ্বাসঘাতক কাপুরুষ। কারণ আমি জীবনের উপর বাজি রাখতে পারিনি। কারো সুখের মার্গে কাটা হতে চাইনি।হয়ে গেলাম বাজে প্রেমিক যে কেবল লাভ-ক্ষতিকেই বিবেচনায় প্রধান্য দেয় যার ঝুঁকি নেওয়ার সামর্থ্য নেই।হয়ে গেলাম আবেগহীন বিবেকবান কাপুরুষ প্রেমিক।তাতেও আমার দুঃখ নেই, যদি তুমি সুখে থাক।কারন তোমার সুখ আর মঙ্গল কামনায় আমার প্রেম সার্থক হয়ে উঠবে।আমি প্রায়ই মানুষকে বলি,, আপনি কাউকে ভালবাসেন তার মানে এই নয় যে তাকে আপনার পেতেই হবে।
- তোমাকে নিজের করে না পেয়েও সারাজীবন তোমাকে ভালবেসে যেতে পারি যা প্রকৃতপক্ষে শেষ হবার নয়।যারা বলে, থাকতে যদি না পাই তোমায় চাইনা মরিলে,তারা আসলে ভোগবাদী প্রেমিক। তাদের দলে আমি নেই।কারন এজীবনে তোমাকে কাছের করে না পেলেও, মরনের পর পরলোকে ঠিক আগের মত তোমার সঙ্গ পেতে চাই।

প্রমিলা:আচ্ছা বাদ দাও ওসব।
তুমি হয়ত জাননা, আমি এখনো অতীত স্মৃতির মধ্যে হারিয়ে গিয়ে অসম্ভব রকমের আনন্দ পাই।আনন্দ পাই তোমার দেওয়া প্রেমপত্র বারংবার পড়তে, যেটা তুমি নবম শ্রোণীতে পড়া অবস্থায় আমায় দিয়েছিলে।আমি সুখ পাই আমাদের স্বপ্নেগুলোর কথা ভেবে। তুমিতো তো আমায় প্রায়ই বলতে, তুমি দেখে নিও প্রমিলা, আমাদের এই ভালবাসা শেষ হবার নয়।যে কোনো বিপদে তোমার হাত আমি ছাড়ব না বরং ধরে থাকব অনন্তকাল পর্যন্ত। কোথায় গেল তোমার সে সব কথার মূল্য। তোমাকে কি বলব? তুমিও যে পুরুষ যারা মেয়েদের প্রেম এবং স্বপ্নের মূল্য দিতেই জানে না।

 আমি:আবেগের বশে তোমাকে দেওয়া কথা আমি সত্যিই রাখতে পারিনি আর ভবিষ্যতে পারব কিনা বা সুযোগ হবে কিনা সত্যিই জানিনা।
কারন আমি যে পুরুষ, যে মেয়েদের মূল্য দিতেই জানে না।কিন্তু সে জানে তার পরিবারের প্রতি তার কর্তব্যের ভার সম্পর্কে।
তুমি তো জানই,আমার ছোট বোনটা প্রায় তোমার সমবয়সী। বর্ণবাদ প্রথার বেড়াজাল এবং যৌতুক প্রথার কুফলের জন্যে আজও ওর বিয়ের ব্যবস্থা করতে পারিনি।তুমি তো এটাও জানো, আমার বাবা সামান্য কৃষক।কোনো রকমে কষ্ঠ করে আমাদের সংসার চলছে।তুমি শুনলে অবাক হবে যে,আমি যখন সম্প্রতি বাড়িতে যাই,তখন আমার পরিবারের সদস্যদের প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে,
-তুর পড়া শেষ হতে আর কত দেরি?
-আর চাকরিই বা পাবি কবে?
এতগুলো মানুষের স্বপ্ন যেখানে আমাকে ঘিরে ঘোরপাক খাচ্ছে সেখানে আমার নিজের স্বপ্নকে বাস্তবায়নে গুরুত্ব দেওয়া যে মহাপাপ।

তুমি তো এটাও জানো, এই দুর্নীতিগ্রস্থ বাংলাদেশে চাকরি পাওয়াটা কতটা কঠিন।

প্রমিলা :তার মানে তুমি আমার সাথে তোমার প্রেমকে তোমার পরিবারের স্বপ্ন পূরনের প্রধান অন্তরায় হিসেবে বিবেচনা করছ।আমাকে তোমার বিশ্বস্ত সঙ্গী হিসেবে বিবেচনা করতে পারনি।
আমিও তোমার সহযোদ্ধা হতে পারতাম। হতে পারতাম তোমার ঢাল,হতে পারতাম তোমার করুণ গাথার মিষ্টি তাল।
আমি:কিন্তু প্রমিলা(ফোন বন্ধ হয়ে গেল).......

No comments

Powered by Blogger.