Header Ads

সুসময়ের স্বর্গদর্শন -লিংকন ভদ্র


রহস্যময় পৃথিবী, মানবজীবন এবং ঈশ্বরের সৃষ্টির জটিল বিষয়সমূহের মধ্যে কিছু যেমন প্রমাণিত নয়, তথাপি এগুলো অস্বীকার এর সুযোগ নেই।ধরীত্রির প্রায় প্রতিটি মানুষ,ঈশ্বরের অস্থিত্ব তথা তার সৃষ্ট স্বর্গ-নরকে বিশ্বাসী।আমি নিজেও এর ব্যতিক্রম নই।পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের মূখ্য ইচ্ছা হতেই
পারে,কমপক্ষে একটিবার হলেও নিজ নেত্রে স্বর্গদর্শন। সে ইচ্ছা থেকেই, আমি শয়নে-স্বপনে এর সম্পর্কে ধারনা লাভের বৃথা প্রয়াস প্রায়শই করতাম।একদিন আমি অনুভব করলাম আকস্মিক বজ্রাঘাতের দ্বারা অল্প বয়সেই আমার প্রাণবায়ু দেহ ছেড়ে সপ্তআকাশের দিকে ধাবমান হচ্ছে। নিজের মনকে বোঝাতে সক্ষম হলাম, এর নামই হয়ত মৃত্যু, মানুষ যাকে সবচেয়ে বেশী ভয় পায়।মহাশূন্যে ভাসমান অবস্থায়,দুজন প্রহরী এসে বলন:চলুন? আমারা স্বর্গের রাজা ইন্দ্রের দূত। আপনাকে সেখানে নিয়ে যেতে এসেছি।
আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম, কেমন করে আমি স্বর্গে যাওয়ার যোগ্য হলাম? বলার মত সেরখম কোনো ভাল কার্য তো আমার দ্বারা হয়নি, ধর্ম-কর্ম তো দূরের কথা।
একজন প্রহরী মৃদু হেসে বলল:আমি আপনার মনের কথা বুঝতে পেরেছি।তাহলে শুনুন, আপনি পৃথিবীতে অবস্থানকালে, অধিক সন্দেহপ্রবন ছিলেন, কোনো কিছুর প্রতি আপনার পূর্ণ আস্থা ছিল না।তবে কিছু পূন্য
কর্ম অবশ্যই করেছেন।
২য় প্রহরী বলল:তবে অানন্দিত হওয়ার কিছু নেই, আপনাকে স্বল্প পূন্যের দ্বারা,প্রাথমিকভাবে স্বল্পকাল স্বর্গে থাকার অনুমতি দিলেও, বেশিরভাগ সময় আপনাকে নরকেই থাকতে হবে।
আমি অনেক ভয় পেয়ে গেলাম।তবুও ভবিষ্যৎ কষ্ঠের কল্পনা করে, বর্তমানের সুখ নিঃশেষ করার মত বোকা আমি নই।তাই আমি দুই প্রহরীর সহিত সুদর্শন রথে চড়ে স্বর্গপানে রওনা হলাম।স্বর্গদর্শন? সে তো এক অদ্ভুত অনুভূতি যা প্রকাশযোগ্য নয়। →হরেক রংয়ের অসংখ্য তারকারাজির সহিত গোলাপি গগন আমার মনে-প্রানে, এক অনাবিল আনন্দের শিহরণ জাগ্রত করেছিল।কিছুক্ষণ পর দৈব রথে স্বপ্ত গগন পেরিয়ে স্বর্গলোকের দ্বারে পৌঁছালাম। সে কি মনোরম দৃশ্য যা আমার মত মানবের কল্পনাতীত।
চারদিকে নীল, লাল সহ হরেক রখমের পুষ্প দ্বারা সুসজ্জিত এবং পাশ দিয়েই বহে গেছে অমৃতসম স্বাদের অধিকারী সরু নদীসমূহ যার তটে খেলা করছে অসম্ভব সুন্দর সব প্রানীসমূহ; তারা যেন পূর্ণ লাবণ্যে ভরপুর।স্বর্গলোকে প্রবেশ করার সাথে সাথেই,বেশ কয়েকজন অতি রূপসী রমনীগণ পুষ্পবৃষ্টির সহিত আমায় বরণ করে একটি সুসজ্জিত কক্ষের দিকে নিয়ে গেল যা কিনা অতি দুর্লভ পদার্থ দ্বারা নির্মিত।
যেখান থেকে পাওয়া যায় সব ধরনের সুবিধা যা আমি পেতে চাই, দেখা যায় সব মনোমুগ্ধকর দৃশ্য যা আমি দেখতে চাই।সব কিছুই যেন আমার ইচ্ছের অধীন।যেখানে নেই দিনরাত্রির প্রভেদ, নেই রোগ-শোকের দুশ্চিন্তা, শুধু সুখ আর সুখ যা প্রত্যেক মানুষের প্রত্যাশিত।অতিরিক্ত কেনোকিছুই প্রকৃতপক্ষে সুখ প্রদান করে না সেটা যেন স্বর্গে গিয়েও অনুভব করছিলাম।সেই আমিই অনুভব করলাম, সেই বিশ্রামের প্রশান্তি যা আমি অতি পরিশ্রমের পর লাভ করতাম।সেই আমিই অনুভব করলাম,পৃথিবীর নগণ্য আহারের অমৃতসম স্বাদের অভাব যা কিনা আমায় আমাকে অতি ক্ষুদায় তৃপ্তি প্রদান করত।তবুও নানান প্রশ্ন এবং কিছু অপ্রাপ্তিতার সহিত অতি সুখেই সময় অতিবাহিত হচ্ছিল।
হঠাৎ একদিন অন্য দুজন ভয়ংকর চেহারার প্রহরী এসে বলল:চলুন, এবার নরকে!
সুসময়:এত তাড়াতাড়ি ?
১ম প্রহরী:স্বর্গের অতিসুখে সময় তাড়াতাড়ি অতিবাহিত হয়,এটাই সবার মনে হয় যা কিনা নরকের ক্ষেত্রে বিপরীত।
২য় প্রহরী:আপনার স্বর্গে এসে এর সমালোচনা করাও দ্রুত নরকে গমনের অন্যতম কারন।
আমি নরকের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানি, তাই আমি সহজে সেখানে যাওয়ার পাত্র নই। তাই আমি নরকে না যাওয়ার জন্যে, দুই প্রহরীর সহিত দস্তাদস্তি করতে লাগলাম।এর ফলে আমার কোলবালিশটা বিছানা থেকে মেঝেতে পড়ে গেল।এর মধ্যেই আমার নিদ্রা ভঙ্গ হল।জাগ্রত হয়ে মনে মনে বলতে লাগলাম,পাপ বেশি না করলেও, কম করিনি।স্বল্প পূন্যে যেহেতু স্বর্গ দর্শন করেছি,না চাইলেও স্বল্প পাপের জন্যে নরকের দর্শন সুনিশ্চিত।

No comments

Powered by Blogger.