Header Ads

অদ্ভুত প্রেম(২৬-০৪-২০১৮) -লিংকন ভদ্র

আমি দুর্জয়।হৃদয়ের মধ্যে অজস্র অাশা নিয়ে ২০১৪-১৫ সেশনে অামি ঢাবির ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুরেন্স বিভাগে ভর্তি হয়ে জগন্নাথ হল এ উঠি।
ভদ্রতা শিক্ষা আর নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে-নিতে কিভাবে যে একবছর চলে গিয়েছিল সেটা বুঝতেই পারি নাই।
এই পরিস্থিতিতে প্রতিটি ছাত্রের মাথায় প্রথমত যে বিষয়টি ঘুরপাক খায় সেটা হল যে কোনো উপায়ে একটি প্রেম করা। আমরা যারা ছাত্র তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে বড় ভাই বা শিক্ষকদের বলতে শুনি যে, কোনভাবে একবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যাও।তারপর দেখবে অসংখ্য সুন্দরী মেয়েরা তোমার পেছনে ঘুরতে। বাস্তবে যা বিপরীত।
এটা যে আমাদের মত ছাত্রদের দিয়ে পড়াশোনা করানোর একটা উত্তম কৌশল ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
সেটা মেনে নিলাম,কারন শিক্ষকেরা আমাদের মঙ্গলের জন্যেই এই কৌশলের অাশ্রয় নিয়েছিল।

বলে রাখা ভাল যে,
আমি যে পরিবার বা সমাজ থেকে এসেছি, তারা যে এখনো অাধুনিক যুগ থেকে অনেক পেছনে পরে আছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
যেখানে প্রেম করাকে পাপ মনে করা হয়। এমনি অপরিচিত ছেলেমেয়েদের মধ্যে আলাপনকে অপরাধ মনে করা হয়।তাই অপরিচিত মেয়েদের সাথে প্রয়োজনে কদাচিৎ কথা হত।আপনারা হয়ত বিশ্বাস করবেন না।তবুও বলছি, উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা পর্যন্ত আমার কোনো মেয়ে বান্ধবী ছিল।কারন আমি যে
পাপকে ভীষন ভয় পাই।কারন আমি নরকের আগুনে দগ্ধ হতে চাইনা।

এবার আসল কথায় আসি,
প্রায়ই স্কুল-কলেজের বন্ধুরা ফোন করে প্রথমে জিজ্ঞাসা করত,কিরে তুই কি প্রেম করিস বা প্রেমিকা কয়টা আছে?
আমার নেতিবাচক উত্তর শুনে তারা বলত যে,তুই ঢাবিতে পড়িস আর এখনো একটা প্রেম করতে পারলি না।তা যদি সত্যি হয় তাহলে ব্যর্থ তোর জীবন, প্রশ্নবিদ্ধ তোর যৌবন।
তখন আমি যে উত্তর প্রদান করি তাতে যে তারা সন্তুষ্ট নয়,সেটা আমি বুঝতে পারতাম।
অপরদিকে হল এর যে রুমেই থাকি, সেখানেই প্রেমিক পুরুষদের অাধিক্য আমাকে প্রেম করতে প্রভাবিত করত।

যাবতীয় পরিস্থিতি বিবেচনা করে মনে মনে স্থির করলাম,নিজের যৌবনের উপর থেকে কালিমা অপসারণ এবং বন্ধুদের তিরস্কার থেকে নিষ্কৃতি লাভের জন্যে হলেও অন্ততপক্ষে একটি প্রেম তো করতেই হবে।
৭ই জুন ২০১৬,
ফেইসবুকের কল্যাণে উচ্চমাধ্যমিক এর ছাত্রী মিথিলার সাথে আমার পরিচয় হয়।সে যথেষ্ট সুন্দরী ছিল।ওকে আমি ভালবাসতাম কিনা সেটা আমার জানা
নেই। তবে কেনো জানি ওর সাথে কথা বলতে আমার ভীষণ ভালই লাগত।এই বয়সে ছেলে-মেয়েদের এরকম ভাললাগাটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।
এই ভাললাগার উৎস কি ওর প্রতি আমার ভালবাসা না নবযৌবনে মেয়ে মানুষের প্রতি আকর্ষন সে বিষয়টিতে আমি একটু সন্দিহান ছিলাম।
আমি আমার সন্দেহ দূর করার চেষ্টা বা ভাললাগার উৎস না খোঁজে প্রথমে যে বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে শুরু করলাম,সেটা হল যে কোনো উপায়ে তাকে জয় করা।

পাঠকদের সুবিদার্থে বলে রাখি আমি একজন নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে, যাদের প্রেম করার স্বপ্ন দেখা ভাল কিন্তু বাস্তবে তা করার মত বিড়ম্বনা আর নাই।
মিথিলার সাথে প্রায়ই আমার কথা হত।আমরা একে অপরের সম্পর্কে জানতে শুরু করলাম।আর সে জানার
পরিধি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করতে লাগলাম।আমরা একে অপরকে প্রেমের প্রস্তাব না দিলেও, আমরা একটা ব্যাপারে একমত ছিলাম যে,আমাদের মধ্যে কিছু তো একটা আছে।তার নাম প্রেম কিনা সে ব্যাপারে আমার যে সন্দেহ আছে তা পূর্বেই উল্লেখ করেছি।

আমি ওকে নিজের করে পাওয়ার কথা ভাবতাম না।বিষয়টা হঠাৎ করে ভাবা এতটা সহজ নয়।তবে সাধারণভাবে বলতে গেলে, সে যে আমার প্রথম প্রেমিকা তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সে আমার হোক বা না হোক, সে যে আমার হৃয়দের একটা বিশাল জায়গা জোড়ে থাকবে তাতেও কোনো সন্দেহ নেই।

সম্পর্ক গড়ার প্রারম্ভিক পর্যায়ে আমি ওর কাছে কিছু সত্য গোপন করেছিলাম যা প্রায় সকল প্রেমিকগণ করে থাকেন।
৫ই জুলাই, ২০১৭
ওকে আমার যাবতীয় সমস্যা,পরিস্থিতি এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে বলেছিলাম।
সব কথা শোনার পরও সে আমাকে কোনোদিনই হেয় করার চেষ্টা তো দূরের কথা বরং সে সর্বদা আমাকে অনুপ্রেরণা জোগাত।

বন্ধুরা প্রায়ই বলাবলি করত, মেয়ে মানেই স্বার্থপর হয় এবং টাকাওয়ালা ছেলেদেরই ওরা পছন্দ করে।কিন্তু মিথিলার সাথে শিরোনামহীন সম্পর্কে আমি এই ভুল ধারনা থেকে বের হতে পেরেছিলাম।

এইভাবে কিছুদিন কথা বলার পর ও আমার বিশ্বস্ত বন্ধুতে পরিণত হয়েছিল।
ওর সাথে আমার ফোন বা ম্যসেজ এ কথা হয়।যদিও সে কাছেই থাকে,তথাপি সরাসরি দেখা হয়নি কোনোদিন।

আমি মাঝেমধ্যেই ওর সাথে আমার সম্পর্কের ব্যাপারে ভাবতাম। এবং এটাও ভাবতাম যে, ওর সাথে আমার সম্পর্ক করা ঠিক হবে কিনা?
আমি কি তার বিশ্বাসের মূল্য দিতে পারব?
সবচেয়ে বড় কথা হল, ওকে ভালবাসতে পারব কিনা।
মাঝখানে একটি বিশেষ কারনে ওর সাথে আমার যোগাযোগ হয়নি।ওর ফোন এবং ফেইসবুক বন্ধ ছিল।কিন্তু ওর সাথে যোগাযোগ করার বিকল্প উপায় ছিল আমার কাছে।তবুও আমি ওর সাথে যোগাযোগ করিনি।
ঠিক ঔই সময় আমি স্বয়ং নিজের সাথেই আমাদের প্রেমের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতাম।
আমি নিজের মনকে বলতাম,মেয়েটির হয়ত বয়স কম। আর সে জন্যেই হয়ত আবেগের অাধিক্যের কারনে তোর সাথে সম্পর্কে জড়াতে চাচ্ছে। যে আবেগ অভাব আর প্রতিবন্ধকতার সামনে অতি সহজেই বিলিন হয়ে যায়।
ও যথেষ্ট অাধুনিক মেয়ে।অপরদিকে আমি প্রায় পুরোপুরি সনাতন যুগের প্রতিনিধিত্বকারী গ্রাম্য যুবক।ওর সাথে আমার সমন্বয় করে চলতে ব্যাপক সমস্যার সম্মূখীন হতে হবে।
এমন ও তো হতে পারে,সে মুখে বলছে এক কথা, আর বাস্তবিক পরিস্থিতিতে পড়লে যে এর ভিন্নতা হবে না,বা সে যে আমাকে প্রত্যাখ্যান করবে না, তার তো কোনো নিশ্চয়তা নেই।
আমরা যারা মানুষ তাদের ক্ষেত্রে এমনটা ঘটা অস্বাভাবিক নহে।
একবার আমার মনকে প্রশ্ন করলাম যে, তার কেমন মেয়ে পছন্দ?আমার মন যে ধরনের মেয়ের ইঙ্গিত দিল তাদের তুলনায় আমার মিথিলা অনেক উর্ধ্বে অবস্থান করে।তাই আমি ওকে আমার নিজের করে পাওয়ার যোগ্যতা রাখি না।
বর্তমানে ও একটি মেডিক্যালে পড়াশোনা করে।গত কয়েকদিন ধরে ওর সাথে আমার কথা হচ্ছে। ওর সাথে কথা বলে আমি ভীষণ অবাক হই।সে উদানিং অনেক বাস্তবিক কথা বলতে শিখে গেছে। বেড়িয়ে এসেছে আবেগের মায়াজাল থেকে। বিষয়টা আমারও পছন্দ হয়েছে।
আমি এখন তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।সাধারণত আমাদের আবেগের অাধিক্যে সময় অতিক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে হ্রাস পায় এবং আমার ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে।

এখনও আমরা একরখম বিশেষ ধরনের খুবই ভাল বন্ধু।


No comments

Powered by Blogger.