গভীর রাতের আলাপন -লিংকন ভদ্র।
আজ মিজানের বিয়ে, অতি ভদ্রছেলে হওয়ার কারনে মা-বাবার পছন্দের মেয়ের সাথেই তার বিয়ে হচ্ছে।পরিবারের সবার সাথে গিয়ে মেয়েকে দেখে এসেছিল মিজান।তবে মেয়ের সাথে কথা হয়নি তার।যদিও মিজানের বড় ভাই মিজানকে জিঞ্জাসা করেছিল, মেয়েকে তার কিছু বলার আছে কিনা?
মেয়েটির মায়াবি চোখ আর লাবণ্যময় মুখপানে তাকিয়ে সে লজ্জায় মাথা নেড়ে নেতিবাচক ইশারা করেছিল।যথারীতি বিয়ের সার্বিক প্রাথমিক কার্য শেষ হওয়ার পর তাদের বাসর রাতের ক্ষণ উপস্থিত হল।আজ তাদের বহুল প্রতিক্ষিত সে রাত যার প্রত্যাশী প্রতিটি মানুষ।মিজান বাসর ঘরে প্রবেশ করে প্রত্যক্ষ করল হরেক রখম ফুলের সুবিন্যস্ত সাজের দরুন ঘরটি যেন স্বর্গীয় রুপ ধারন করেছে।সে আস্তে-ধীরে বিছানায় এসে বসল। মেয়েটি খাটের এককোণে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে। মিজান মৃদুস্বরে জিঙ্গেস করল,
কেমন আছ,প্রিয়া?
#প্রিয়া:ভাল,আপনি কেমন আছেন?
মিজান:বেশ ভালই,,তোমাকে পেয়ে আমি যেন আরও অনেক আনন্দিত এবং পূর্ণতা অনুভব করছি।
প্রিয়া আস্তে করে বলল: কি জানি,,হয়ত।
মিজান:তুমি হয়ত জান?,, আজ এই অল্প সময়ের পরিচয় আমাদের একসাথে ভবিষ্যৎ পথচলার ভিত্তি। প্রিয়া:সেটা আপনার মনে হলেও, আমার তা মোটেও মনে হয়না।
মিজান:ঠিক, বুঝলাম না।
প্রিয়া:অল্প সময়ের পরিচয়ে সঠিক মূল্যায়নে সমস্যা হবে সেটাই স্বাভাবিক ।আপনাকে আমি পূর্ণরূপে জানতে চাই,, রক্ষনশীল পরিবারের মেয়ে বলে আগে কিছুই জানতে পারিনি।
মিজান :বল, কি জানতে চাও?
প্রিয়া:বলুন আপনার সাবেক প্রমিকার সম্পর্কে, যদিও বলতে পারেন সেরখম কিছু থাকলে কি আর আমাকে বিয়ে করতেন।আমি সেরখম কিছু শুনতে চাইনা। মিজান:তাহলে সরাসরিই বলি,,শুন? বুঝতেই পার, অতি লাজুক ছেলে হওয়ার দরুন কাউকে ভাল লাগলেও বলতে পারিনি।,কারন আমি এটা জানতাম যে, অনেক কিছুই আমার ভাল লাগবে, তার মানে এই নয় যে আমি সেগুলো পেতে পারি বা সেগুলো পাওয়ার যোগ্য।,তবে ভাল লাগা গুলো সময়ের সাথে কেমন যেন পরিবর্তিত হচ্ছিল।
প্রিয়া:কাউকে বলেননি কেন?
মিজান:কাউকে বলে, হারিয়ে কষ্ঠ পাওয়া বা কাউকে কষ্ঠ দেওয়ার মত কাজে আমি সার্থকথা খোঁজে পাইনা।যেহেতু আমি জানিই পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। প্রিয়া:বুঝলাম, আপনি কাকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন?
মিজান:তাকেই,, যে ছিল আমার প্রথম পছন্দ, যে ছিল নিত্য একপথে চলার মৌন সংঙ্গী এবং যার বিয়ে হয়েছে বছর চারেক আগে।
প্রিয়া :কষ্ট পাননি উনার বিয়েতে?
মিজান:খুবই অল্প।কারন সেটাই স্বাভাবিক।বাদ দাও ওসব, তোমার সম্পর্কে কিছু বল?
প্রিয়া:সত্যি বলতে আমিও পছন্দ করতাম পাশের গ্রামের নুরুন ভাইকে।কিন্তু তিনি তো পড়াশোনা শেষ করে কয়েক বছর ধরে চাকরির চেষ্টা করেই যাচ্ছে,, হচ্ছে না।অপরদিকে #বড়_ছেলে নাটকের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, অামাকে অন্যত্র বিয়ে করার জুড়ালো আবেদন জানিয়েছে।কিছু মনে করবেন না, সত্যি বলতে আপনাকে আমার খুব একটা পছন্দ হয়নি, জানি না আপনাকে আমি মেনে নিতে পারব কিনা?
মিজান:তুমি আগেই সেকথা বলতে পারতে। প্রিয়া:আপনি ভালভাবেই জানেন, মেয়েদের মতের গুরত্ব এই সমাজে খুবই কম।নইলে রামের নিকট সীতাকে কি আর অগ্নি পরিক্ষার দ্বারা প্রমান করতে হত, সে সতী।আপনি হয়ত জানেন স্বয়ং ঈশ্বরও নারীর স্বাধীনতার বিরুদ্ধে।
মিজান:আস্তে করে বলল, তুমি ঠিকই বলেছ..সে সত্যজিৎ রায়ের বই নিয়ে পাশের ঘরের পানে রওনা হল।
প্রিয়া:এই যে শুনুন?
মিজান:জ্বি।বল?
প্রিয়া:যাইহোক,, আজ আমাদের বাসর রাত...কাছে এসে বসুন না,, অনেক কথা যে আরও বাকি!
মিজান :তাড়াতাড়ি বল, কি বলবা?
প্রিয়া:আপনি কি করবেন এখন?আপনাকে কি খুব বেশি কষ্ঠ দিয়ে ফেললাম?
মিজান: আমি কি করব সেটা তোমাকে কেন বলব?আর তুমি আমাকে কষ্ঠ দেওয়ার কে?বরং তুমি কিছুদিন পর একথা বললে হয়ত কষ্ঠ অনেক বেশিই পেতাম।
প্রিয়া:তা অবশ্য ঠিক।তাহলে কি আমাকে ফিরিয়ে দিবেন?
মিজান: তুমি কি ভেবেছ,,?নাটক-সিনেমার ন্যায় তোমার মন জয় করার চেষ্টা করব আর তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার ফালতু নাটক করব।আমি সেরখমটা পারব না।বরং তুমি চলে যেতে চাইলে চলে যাও...তোমার প্রতি মায়া সৃষ্টির পূর্বেই।
প্রিয়া:তার মানে আমার প্রতি আপনার মায়া ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মিজান:তোমাকে এ ব্যাপারে বলতে আমি বাধ্য নই।
প্রিয়া:জানেন?#হুমায়ুন_আহমেদ_স্যার_বলতেন কোনো মানুষকে জানতে হলে, তার স্বপ্ন সম্পর্কে জানুন,,আচ্ছা আপনার স্বপ্ন সম্পর্কে কিছু বলুন না?
মিজান:প্রথমত আজীবন ভালবাসতে চাই নিজেকে এবং সম্পর্ক অনুযায়ী নিজের কাছের মানুষদের। ভেসে যেতে চাই সেই কল্পনার রাজ্যে যেখানে রাজা আমি স্বয়ং।স্বাধীনতার সহিত বাঁচতে চাই শেষ নিঃশ্বাস অবধি। সময়ের পরিবর্তনে স্বপ্নের পরিবর্তন হবেই তার সাথে ভারসাম্য রেখে চলতে চাই, যদি কেউ রাজি থাকে তবে আমি তাকে সাথী করতে পারি।
প্রিয়া:বিয়ে তো স্বাধীনতা হরণ করে, সেটা কি আপনি জানেন না?
মিজান:আমি সবই জানি,, তবে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তোমাকে আমি বোঝাতে পারব বলে বিশ্বাস ছিল।
প্রিয়া :বুঝলাম।আচ্ছা বলুন তো,, যে আমাকে চিরদিনের সাথী হওয়ার কথা দিয়েছিল,দিয়েছিল বিপদে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি, তার নিজস্ব সমস্যায় যে আমাকে ত্যাগ করেছে তার কাছে যাওয়া কি ঠিক হবে?
মিজান:এসব ব্যাপারে অন্যের মতামত নিতে নেই,, নিজের মনের কথা শুন, আর একাধিক বিকল্প ভাবনা থেকে সর্বোত্তম ভাবনাটি বেছে নাও।
প্রিয়া:যদি আপনাকে বেছে নেই, আপনি কি আমায় গ্রহন করবেন?
মিজান:আমি তোমাকে গ্রহন করেছি তখন , তোমার নয়নের সহিত আমার প্রথম সাক্ষাৎ যখন।
প্রিয়া:জানেন?সত্যি বলতে আমার কোন প্রেমিক ছিল না বরং মিথ্যা বলে আপনার মনের কথা জানার প্রয়াস করছিলাম মাত্র।
মিজান: তুমি কিন্তু আমার আসল কাহিনি জান না?
আমিও ইচ্ছে করেই আমার ঘনিষ্ঠ প্রেম গুলার কথা তোমাকে এখনো বলিনি।
প্রিয়া:শয়তান, বদমাস, মেয়েবাজ বলে হাসতে হাসতে, বালিশ দিয়ে পেঠাতে লাগল।
মিজান:থাম! থাম! কি করতেছ এসব, ফেটে যাবে তো...
#বাকি_কাহিনী_না_জানাই_উত্তম<
No comments