Header Ads

মধুর বিড়ম্বনা(১৭-০৬-২০১৮) -লিংকন ভদ্র

২ রা ফেব্রুয়ারি ২০১৮,
আজ আমার ছোট বোনের বিয়ে।আমার বাড়ির উঠানের ঠিক মাঝখানে একটি সুসজ্জিত মন্ডবে বিয়ে হচ্ছে। আর আমি একটু দূরের একটি চেয়ারে চুপচাপ বসে আছি।
আমি সাধারণত কথাবার্তা একটু কমই বলি।আগবাড়িয়ে কথা বলার অভ্যাস আমার নেই বললেই চলে।
কেউ যদি আগবাড়িয়ে কথা বলতে আসে, তাহলে তার সাথে কথা বলতে আমার কোনো আপত্তি নাই।
বিয়ে বাড়ির বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বরপক্ষ থেকে আগত মেয়েদের নৃত্য দেখছিলাম।
ঠিক তখনি একটি মেয়ে  আমার পাশের আরেকটি চেয়ারে এসে বসল।মেয়েটি আমাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলল,
এই যে মিস্টার!
আমাকে চিনতে পেরেছেন?
আমি:অবাক হয়ে মেয়েটির দিখে তাকালাম এবং বললাম,না তো,ক্ষমা করবেন আপনাকে ঠিক চিনতে পারছি না।
মেয়েটি বলল:সম্পর্কে আমি আপনার কি হই তা তো আপনার জানা উচিত ছিল।
বলুন তো, আমি কে হতে পারি??

আমি একটু মৃদু হেসে বললাম,আপনি বরপক্ষ থেকে আগত রমণী, সম্পর্কে আমার বেয়াইন হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

মেয়েটি:ঠিকই ধরেছেন,, আমি বরের মামাত বোন।তবে আমি কিন্তু ঠিকই আমার এক বান্ধবীর মারফত আগেই আপনাকে চিনে নিয়েছিলাম।
আমি:সে তো খুব ভাল ব্যাপার।বেয়াইন তো এমনই হওয়া উচিত।তবে আমিও আপনার মত অকপট রসিক বেয়াইনয়ের সাথে পরিচয় হতে পেরে ধন্য।

বেয়াইন:তাই বুঝি?
আচ্ছা,বলুন তো?
আপনি বিয়ের অনুষ্ঠানে আনন্দ না করে, এরকম একা একা চুপচাপ বসে আছেন কেন?
আমি:আনন্দ?
 সে তো পাওয়া যায় মনকে প্রফুল্লিত করে এমন কোনো দৃশ্যমান বা অদৃশ্যমান বস্তুর প্রাপ্তিতে বা কল্পনায়।
আজ তো আমাদের হারানোর দিন।আমাদের অতি অাদরের ছোট  বোনটি আমাদের ছেড়ে  চলে যাবে অন্যের ঘরে।যার পথযুগলের নূপুরের ধ্বনিতে জীবন ফিরে পেত আমাদের আলয়।তাকে বিসর্জন দিয়ে কি করে আনন্দ করব।
এমনকি,আজ আমার বোনের ১৮ বছরের অভ্যাস, স্মৃতি, কাছের মানুষ এবং নিজের স্বাধীনতাকে প্রায় বিসর্জন দিয়ে পর মানুষকে আপন করে অনিশ্চিত জীবনে সুখ খোঁজে নেওয়ার সূচনা করতে যাচ্ছে। অতি আদরে লালিত বোনটি আমার অন্যের ঘরে চলে যাবে। ব্যাপারটা স্বাভাবিক হলেও, মনকে বোঝাতে তো একটু সময়  লাগবেই।

বেয়াইন:প্রত্যেকটি মেয়ের জীবনে এ ব্যাপারটা ঘটেই থাকে, তাই এ নিয়ে না ভেবে আনন্দ করাই উত্তম।
আমি:আপনি ঠিকই বলেছেন।তবে আমি এরকমই।কষ্টকে সহজে চাপা দিয়ে রাখতে পারি না।এমনিতেও সাধারনত আমি চুপচাপ থাকতেই পছন্দ করি।
বেয়াইন:কিন্তু সেটা তো এখন হচ্ছে না,, বেয়াইনয়ের সাথে এখন টানা কথা বলতে হবে।
আমি:অবশ্যই বলব।সুন্দরী বেয়াইন বলে কথা।
বেয়াইন চোখে ইশারা করে হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন, আছে নাকি???
এই প্রশ্নটা দ্বারা যে কি বোঝায়,?সেটা যে বুঝবে না, সে এখনো প্রাপ্তবয়স্ক হয়নি।
আমি মৃদু হাসতে হাসতে জবাব দিলাম:নেই,,তবে খোঁজতেছি।
বেয়াইন:নেই?না, আশেপাশের নতুন কারোর সাথে চান্স নেওয়ার ধান্দা।
আমি ক্ষাণিকক্ষণ হেসে জবাব দিলাম:
তাতে ক্ষতি তো আর নেই। বরং নতুনত্বের আনন্দ অাস্বাদনের সুবর্ণ সুযোগ পাওয়া যাবে।
বেয়াইন:,বুঝলাম।আপনি বোকার ন্যায় ভাব ধরলেও,সহজসরল মানুষ আপনি নন।
 আমরা ফেইসবুকে বন্ধু হতে পারি?
আমি:অবশ্যই,কেন নয়?
সেদিন থেকে আমরা ফেইসবুকে বন্ধু হয়ে গেলাম।
ঠিক তখনি, বেয়াইনের পিতা বেয়াইনকে ডাকছে,,পরে কথা হবে বলে, মিষ্টি করে বিদায় জানিয়ে বেয়াইন চলে গেলেন।
এই যে গেলো, আর ফিরে এলো না।
তারপর,মাঝখানে ছয়মাস কেটে গেল।
আর কোনোদিন কথা হয়নি বেয়াইনের সাথে।এমনকি তার নামটিও জানা হয়নি।
আমি ইচ্ছে করেই কথা বলিনি।কারণ যদি প্রেম হয়ে যায়।কারণ সদা হাস্যোজ্জ্বল ইঁদুর দন্তের মেয়েটিকে আমার ভাল লেগে গিয়েছিল।এ যেন প্রথম সাক্ষাৎকারে একতরফা ভালবাসা।
আর যদি প্রেম হয়েও যায় ,বিশেষ করে বোনের ননদের সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ককে আমার পরিবার এবং আমার বোনের পরিবার সহজভাবে নিবে না।বরং আমি
পারিবারিক অশান্তি সৃষ্টির কারণ হব।আর যদি বন্ধুর ন্যায় কথাও বলতাম, আশেপাশের মানুষ এই সম্পর্ককে প্রেমের সম্পর্ক নামে নামকরণ করবে, সেটা শতভাগ নিশ্চিত।
কারণ আমাদের এলাকা,এবং সম্প্রদায়ে প্রেমের সম্পর্ক খুবই নিন্দনীয়।এমনকি এই সম্পর্ক আমার পিতা-মাতা এবং বোনের নিকট অসম্মান এবং দুঃখের কারণ হবে।
তাই ইচ্ছে করেই বেয়াইনের সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করার চেষ্টা করিনি।
১০ই জুন ২০১৮,
আজ ছুটি পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাড়ি আসলাম।পরিবারের সকলের সাথে কুশল বিনিময় করার একটু পর খেয়াল করলাম, আমাদের বাড়ির পেছনের বারান্দায় একটি চেয়ারে আমার সেই বেয়াইন বসে আছে।
আমার দিকে উনার কোনো মনোযোগ নেই বরং উনি এক দৃষ্টিতে বাগানের ফুল-ফল আর পাখিগুলোর দিকে  দিকে তাকিয়ে আছেন।
দক্ষিণা বাতাসে উনার দীঘল কালো চুল পারাবারের ঢেউয়ের ন্যায় ধুলছে।বিকালের রবির অাভা নিঃশেষ হতে তখনো কিছু সময় বাকি।মুখে কৃত্রিম রংহীন উনার স্বাভাবিক চেহারা যেন শুভ্র কাশফুলের ন্যায়।
মস্থিষ্ক থেকে সমস্থ ভাবনা বাদ দিয়ে,আস্তে -আস্তে জিজ্ঞেস করলাম,
এই যে, বেয়াইন সাহেবা,কেমন আছেন??
আমার কথার জবাব না দিয়ে উনি জামগাছের দিকে তাকিয়ে যেন পাখি গুনতে থাকল।
আমি মস্থকের পেছনের অগ্রভাগে মৃদু টুকা দিয়ে বললাম,
অতি মধুর স্বরে আপনার প্রতি আমার সম্ভাষণ কি আপনার কানে পৌঁছায় না?
বেয়াইন একটু রেগে গিয়ে বলল:আজব পাবলিক তো আপনি।
মাথায় টুকা দিলেন কেন?
আর এই যে মহাশয় আগে বলুন তো,কে আপনি?
উনার এই প্রশ্ন শুনে আমি মোটেও অবাক হইনি।
বরং মনে মনে ভাবতে লাগলাম,উনার সাথে অনেকদিন কথা বলিনি তো, তাই হয়ত অভিমানে আমাকে না চেনার ভান করছেন।উনার অভিমান ন্যায়সঙ্গত এবং যৌক্তিক।
আমি:মাফ করে দিন না??একটু ব্যস্ত ছিলাম তো, তাই কথা বলতে পারি নি।
বেয়াইন:একটু অবাক হয়ে,
আরে ভাই আগে বলুন তো, কে আপনি?
আপনাকে আগে চিনতে দিন।
আমি:আপনি একটু বসুন তো। আমি আসছি।
আমি আমার বোনের কাছে গিয়ে জানতে পারলাম, উনি হচ্ছেন আমার যে বেয়াইনের সাথের পরিচয় হয়েছিল, উনার জমজ বোন।
একথা শুনে আমি তো কঠিন বিড়ম্বনায় পড়ে গেলাম।আমার নিজ আচরণের হেতু ক্ষাণিক লজ্জাবোধ এবং অন্তঃপীড়া অনুভব করলাম।
মেয়েটির কাছে গিয়ে আস্তে করে বললাম,,আমি ভুল করে ফেলেছি বেয়াইন, আমি সত্যিই দুঃখিত!
আমাকে ক্ষমা করে দিন।আমি আপনার বউদির বড় ভাই।
মেয়েটি:আরে আপনি বেয়াই মানুষ, দুঃখিত হওয়ার কি আছে?একটি চেয়ার নিয়ে পাশে এসে বসুননা।দুই-চাইর খান কখা বলি।
আমি:পাশে গিয়ে বসা,ঠিক হবে কি??
বেয়াইন:বেঠিক হওয়ার কারণ নেই, কারো সন্দেহ হওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই।
আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
কেন বলুন তো?
বেয়াইন:আপনার সাথে এই আমার প্রথম সাক্ষাৎ, না আছে কোনো পূর্বের সম্পর্ক, অধিকন্তু সামনের মাসে আমাদের দু-বোনেরই একসাথে বিয়ে হবে। আপনি কিন্তু অবশ্যই আসবেন।
একথা শুনে কেন জানি আচমকা মনটা খারাপ হয়ে গেল এবং বুকের বাম পাশে মৃদু চিন-চিন ব্যথা অনুভব করলাম।

No comments

Powered by Blogger.