হঠাৎ পাঁচ বছর পর -লিংকন ভদ্র
আজ যার গল্প আপনাদের বলতে চলেছি তার নাম জয় কুমার সাহা।সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের ছাত্র।
আমি মনে করি,
যৌবনের সূচনালগ্ন থেকে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত মানুষের মনের বাগিচায় প্রেমের ফুল ফুটে বারংবার এবং সেটাই
আমি মনে করি,
যৌবনের সূচনালগ্ন থেকে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত মানুষের মনের বাগিচায় প্রেমের ফুল ফুটে বারংবার এবং সেটাই
হয়ত প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম।
জয়ের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।সেও প্রেমে পড়েছে অনেক রমণীর।
তবে আজ আপনাদের তার প্রথম প্রেমের গল্পটা বলতে চলেছি।
জয়ের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।সেও প্রেমে পড়েছে অনেক রমণীর।
তবে আজ আপনাদের তার প্রথম প্রেমের গল্পটা বলতে চলেছি।
সে প্রথম প্রেমে পড়েছিল স্কুলে থাকতে।যার প্রেমে সে পড়েছিল, সেই মেয়েটির নাম ছিল "নবনীতা"।তারা দুজনই দশম শ্রেণী পর্যন্ত একই ক্লাসে পড়ত।
নবনীতা দেখতে বলার মত খুব বেশী সুন্দরী ছিল না।
তবুও তাকে দেখতে এবং তার কথা ভাবতে কেন জানি জয়ের অনেক ভাল লাগতো।
তার দীঘল কালো অবাধ্য কুন্তল, স্বভাবের চাঞ্চল্য আর মায়াবী মুখের মিষ্টি হাসি দর্শনের কাছে যেন অমরাবতীর সুখের বাসনাকেও জয়ের কাছে তুচ্ছ মনে হতো।
আপনারা হয়ত শুনে থাকবেন,
এন্ড্রু কিশোরের একটা গান ছিল এরকম,,
"যার সাথে যার ভাব, তারে একটু দেখলেও লাভ"।
সে জন্যেই নবনীতা দেখতে যেমনই হোক না কেন,সে ছিল জয়ের স্বপ্নের রাণী আর নিত্য ভাল থাকার কারণ।
আমি মনে করি,
"মনের ভেতর আপনার অজান্তে যার অস্থিত্ব আপনাকে ভাবায়; যার হঠাৎ প্রত্যক্ষ দর্শনে আপনি সাময়িক লজ্জা পান, এবং চালচলন তার স্বাভাবিকতা হারায়।উনিই সেই জন, যাকে আপনি মন থেকে ভালবাসতে শুরু করেছেন"
জয়ের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়ত ঘটেছিল।
স্কুলে থাকতে নবনীতার সাথে জয়ের খুব একটা কথা হতো না।
নবনীতার সামনাসামনি হলেই কেন জানি তার মধ্যে এক অজানা ভয়ের শিহরণ, অস্বস্তি আর অকারণে লজ্জাবোধ তাকে ঘিরে ধরতো।তাই জয় সাহস করে ভালবাসার কথাটি নবনীতাকে সরাসরি কখনো বলে উঠতে পারেনি।
তারা যে দুজন দুজনকে ভালবাসে এই ব্যাপারটা তারা পরস্পরের প্রতি সরাসরি প্রকাশ না করলেও ব্যাপারটি তাদের দুজনেরই অবগত।
নবনীতা দেখতে বলার মত খুব বেশী সুন্দরী ছিল না।
তবুও তাকে দেখতে এবং তার কথা ভাবতে কেন জানি জয়ের অনেক ভাল লাগতো।
তার দীঘল কালো অবাধ্য কুন্তল, স্বভাবের চাঞ্চল্য আর মায়াবী মুখের মিষ্টি হাসি দর্শনের কাছে যেন অমরাবতীর সুখের বাসনাকেও জয়ের কাছে তুচ্ছ মনে হতো।
আপনারা হয়ত শুনে থাকবেন,
এন্ড্রু কিশোরের একটা গান ছিল এরকম,,
"যার সাথে যার ভাব, তারে একটু দেখলেও লাভ"।
সে জন্যেই নবনীতা দেখতে যেমনই হোক না কেন,সে ছিল জয়ের স্বপ্নের রাণী আর নিত্য ভাল থাকার কারণ।
আমি মনে করি,
"মনের ভেতর আপনার অজান্তে যার অস্থিত্ব আপনাকে ভাবায়; যার হঠাৎ প্রত্যক্ষ দর্শনে আপনি সাময়িক লজ্জা পান, এবং চালচলন তার স্বাভাবিকতা হারায়।উনিই সেই জন, যাকে আপনি মন থেকে ভালবাসতে শুরু করেছেন"
জয়ের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়ত ঘটেছিল।
স্কুলে থাকতে নবনীতার সাথে জয়ের খুব একটা কথা হতো না।
নবনীতার সামনাসামনি হলেই কেন জানি তার মধ্যে এক অজানা ভয়ের শিহরণ, অস্বস্তি আর অকারণে লজ্জাবোধ তাকে ঘিরে ধরতো।তাই জয় সাহস করে ভালবাসার কথাটি নবনীতাকে সরাসরি কখনো বলে উঠতে পারেনি।
তারা যে দুজন দুজনকে ভালবাসে এই ব্যাপারটা তারা পরস্পরের প্রতি সরাসরি প্রকাশ না করলেও ব্যাপারটি তাদের দুজনেরই অবগত।
এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর নবনীতার সাথে জয়ের কোনো ধরনের যোগাযোগ ছিলোনা।
তবে সে শুনেছে নবনীতার বিয়ে হয়ে গেছে।
এরকম একটা খবর শুনে জয় ক্ষাণিকটা কষ্ট পেলেও, বাস্তবতাকে সে মেনে নিয়েছিল।সত্যি বলতে তো তার কিছুই করার ছিলোনা।
২০১৩ সালের মে মাসে জয় নবনীতাকে শহরে তার স্বামীর সাথে দেখেছিল।তার স্বামী যদি সন্দেহ করে বসে ,এই ভয়ে আগবাড়িয়ে কথা বলা হয়নি।
এরকম একটা খবর শুনে জয় ক্ষাণিকটা কষ্ট পেলেও, বাস্তবতাকে সে মেনে নিয়েছিল।সত্যি বলতে তো তার কিছুই করার ছিলোনা।
২০১৩ সালের মে মাসে জয় নবনীতাকে শহরে তার স্বামীর সাথে দেখেছিল।তার স্বামী যদি সন্দেহ করে বসে ,এই ভয়ে আগবাড়িয়ে কথা বলা হয়নি।
মাঝখানে কেটে গেল দীর্ঘ পাঁচটি বছর।
০৫-০১-২০১৯
সকাল ৯:৩০,
জয় আজকে নেত্রকোণা জংশন থেকে "হাওর এক্সপ্রেস" ট্রেনে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। কাকতালীয়ভাবে আজ কেনো জানি ট্রেনে খুব বেশী ভীড় নেই।ট্রেনের ভেতর জয় তার নির্ধারিত সিটে বসে খবরের কাগজ পড়তে লাগলো।
তার পাশের সিটের লোকটি আসেনি।হয়ত উনি সামনের কোনো জংশন থেকে উঠবেন।
কিন্তু হঠাৎ করে তার ঠিক সামনের সিটেই একজন মহিলা এসে বসলো। তার কোলে ২-৩ বছর বয়সের ফুটফুটে একটি ছেলে ঘুমিয়ে আছে।
প্রথম দর্শনে ভদ্র মহিলাকে জয় চিনতে পারলো না।তবে কেন জানি তার মনে হচ্ছে ভদ্র মহিলাকে সে হয়ত আগে কখনো দেখেছে।
দ্বিতীয়বার ভালোভাবে দেখে,জয় উনাকে চিনতে পারলো।
তিনি হল জয়ের সেই ক্লাসমেট নবনীতা।
যে মেয়েটি একসময় জয়ের সমগ্র হৃদয় আর ভাবনার জগতজোড়ে অবস্থান করতো।
আজ আর নবনীতার মধ্যে আগের মত সৌন্দর্যের ঝলখানি আর লাবণ্যতা নেই।একটি বাচ্চার মা হয়ে সেও যেনো বাচ্চা হয়ে গেছে। গোলগাল মুখমন্ডলের শ্যামলা রংয়ের যে মেয়েটি জয়কে বিমোহিত করেছিল আজ তার শীর্ণ দেহ,অমসৃণ ত্বক,মলিন মুখ আর এলোমেলো চুল দেখে সে অন্তঃপীড়া অনুভব করল।
নবনীতা জয়কে চিনতে পেরেছে কিনা সেটা জয় জানে না।
তবে আজ জয়ের তৃষ্ণার্ত মনের ভীষণ ইচ্ছে করছে ওর সাথে একটু কথা বলতে।
নবনীতা এখন আর আগের মত সুন্দর নেই।তবুও কেন জানি জয়ের কাছে তার গুরুত্ব বিন্দুমাত্র হ্রাস পায়নি।
প্রথম ভালবাসা বলে কথা।প্রত্যেক মানুষের কাছে হয়ত তার প্রথম ভালবাসার গুরুত্ব সর্বাধিক।
প্রায় পাঁচ বছর পর আজ নবনীতার সাথে জয়ের দেখা।
যে মেয়েটাকে দেখার জন্যে সে ফাঁকিবাজ ছাত্র হয়েও প্রতিদিন ক্লাসে আসতো।পরীক্ষার হল এ যাকে খাতা দেখাতে গিয়ে স্যারের কাছে ধরা খেয়েছিল বারংবার ।যার উদ্দেশ্য লিখিত চিঠি একবার বন্ধুদের হাতে পড়ায়, চিঠিটা ফেরত পেতে প্রতি বাক্যের জন্য ২০ টাকা করে জরিমানা দিতে হয়েছিল।যার ধরুন জয়কে জীবনের প্রথম বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করতে হয়েছিলো।
আমি মনে করি, মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয় এবং অমূল্য সম্পদ হচ্ছে তার ফেলে আসা স্মৃতি।
আজ আবার নবনীতাকে দেখে জয় বয়ঃসন্ধিকালের সেই স্মৃতির সমুদ্রে অবগাহন করে ফেলে আসা অমূল্য স্মৃতির স্মরণ করে এক অনাবিল সুখের পাশাপাশি সমান অনুপাতে পীড়াও অনুভব করল।
জয় নবনীতাকে উদ্দেশ্য করে আস্তে করে বললো:নবনীতা?
নবনীতা জয়ের দিকে তাকিয়ে আপাদমস্তক দেখে বিস্মিত হয়ে একটু মিষ্টি হাসির সাথে বলল,তুমি জয় না?
জয়:চিনতে পেরেছো তাহলে, ভেবেছিলাম হয়ত চিনতেই পারবে না।
নবনীতা:নিজের বিশেষ কিছু ক্লামমেটদের কি আর সহজে ভোলা যায় নাকি। অধিকন্তু তুমি তো সারাক্ষণ আমার আশেপাশেই ঘুর-ঘুর করতে। আর কথা বলতে চাইলেই কোনো একটা বাহানা করে পালিয়ে যেতে আর নয়ত কেমন জানি অস্বাভাবিক হয়ে যেতে।সেজন্যে তোমাকে আমি বিশেষভাবে মনে রেখেছি।
জয় ক্ষাণিকটা মৃদু হাসির সাথে বলল,আচ্ছা ঠিক আছে, বাদ দাও তো ওসব কথা।আগে বলো,কেমন আছো তুমি?
নবনীতা:তুমি হয়ত জানো,এসএসসি পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল।আমার বর একটি কোম্পানিতে চাকরি করতো।এখনো তিনি এই চাকরির মাধ্যমে যে উপার্জন তা দিয়ে আমাদের ছোট্ট সংসার মোটামোটি ভালভাবেই চলে যাচ্ছে ।এইসবকে যদি তুমি সুখ মনে করো,তাহলে আমি সুখী এবং ভালই আছি।
অপরদিকে আমি বাবার বাড়িতে থাকাকালে যেমন পরাধীন ছিলাম, বিয়ের পর আমি আরও পরাধীন হয়ে গেলাম।সংসারের সবার মন রাখতে গিয়ে নিজের সুখকে বিসর্জন দিয়েছি।
স্বাধীনতাহীন কেউ আসলে ভালো থাকতে পারে না।
নবনীতা কৃত্রিম মৃদু হেসে জয়কে উদ্দ্যেশ্য করে বললো,আমার কথা বাদ দাও,তোমার কথা বলো তো:তুমি তো দেখছি অনেক বদলে গেছো।একসময়ের রোগাপাতলা ছেলেটা আজ অনেকটা পরিবর্তন হয়ে নায়কের ন্যায় নাদুসনুদুস হয়ে গেছে দেখছি।প্রথমে তোমাকে দেখে আমি তো চিনতেই পারিনি।
জয় হাসিমুখে বলল:তাই।আসলে পরিবর্তনশীলতাই তো জগতের নিয়ম।তুমিও কিন্তু আগের মত নেই,সেটা তুমি জানো?
নবনীতা:জানি।বাদ দাও ওসব কথা।আচ্ছা,বলো তো,আজকাল কি করতেছো তুমি?
জয়:তেমন কিছুই না।পড়াশোনা করতেছি।তারপর যদি একটা চাকরি পেয়ে যাই তাহলে বিয়ে করে ফেলবো। আমার জন্যে একটা মেয়ে দেখে দিও।
নবনীতা:আচ্ছা ঠিক আছে,দেখব নি।কোনোদিন সময় পেলে আমার বাড়িতে বেড়াতে আসিও।যদিও আমার বাড়ি বলতে তো আর কিছু নেই।আগে ছিলাম বাবার বাড়িতে।আর এখন থাকি স্বামীর বাড়িতে।
সামনের স্টেশনে নবনীতা নেমে যাবে। তাই ওর বাচ্চাটাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে জয়ের কোলে দিল।
জয় নবনীতাকে জিজ্ঞেস করল:বাবুর নাম কি?
নবনীতা:না শোনার ভান করে, জবাব দিলো না।
জয় বাচ্চাটিকেই জিজ্ঞেস করল:তোমার নাম কি বাবা?
বাচ্চাটি অস্পষ্ট স্বরে বল:জয়।
জয় বুঝতে পারলো না, তাই বাচ্চাটিকে আবার জিজ্ঞেস করল:বল তো বাবা,তোমার নাম কি?
বাচ্চাটি এবার স্পষ্ট করে বলল:জয়।
তখনি জয়ের মাথায় যেন নক্ষত্র বিস্ফোরিত হয়ে পড়ল। স্ববিস্ময়ে অবাক হয়ে নবনীতার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো:নবনীতা,ওর নাম জয় রাখলে কেন?
কিন্তু নবনীতা জয়ের চোখে চোখ রাখতে পারছে না।সে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল:তোমার এক বন্ধুর মারফত আমি জানতে পেরেছিলাম তুমি আমাকে ভালবাসো।আমিও তোমাকে পছন্দ করতাম। তাই তোমার নামে
আমার প্রিয় সন্তানের নাম রাখলাম।যাতে আমাদের অপরিপক্ক নিষ্পাপ ভালবাসা যেনো অমলিন থাকে চিরকাল ।
এই বলে নবনীতা গৌরীপুর জংশনে নেমে গেল।
জয় স্তব্ধ হয়ে তার সিটে বসে আছে। তার মুখ থেকে কোনো ধরনের কথা বের হচ্ছে না।সে জানালা দিয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত দেখা যায় ততক্ষণ পর্যন্ত নবনীতার দিকে তাকিয়ে ছিল।কিছুক্ষণ পর ট্রেনটি গৌরীপুর স্টেশন ছেড়ে চলে গেল।
পরিশেষে আমি বলতে চাই, ভালবাসার মানুষকে জীবনসাথী করে না পেলেও তার প্রতি ভালবাসা শেষ হয়না বরং আরও বেড়ে যায়।প্রেমে বিরহ আছে বলেই হয়ত প্রেম এতটা সুন্দর এবং এর মাহাত্ম্য অধিক।
০৫-০১-২০১৯
সকাল ৯:৩০,
জয় আজকে নেত্রকোণা জংশন থেকে "হাওর এক্সপ্রেস" ট্রেনে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। কাকতালীয়ভাবে আজ কেনো জানি ট্রেনে খুব বেশী ভীড় নেই।ট্রেনের ভেতর জয় তার নির্ধারিত সিটে বসে খবরের কাগজ পড়তে লাগলো।
তার পাশের সিটের লোকটি আসেনি।হয়ত উনি সামনের কোনো জংশন থেকে উঠবেন।
কিন্তু হঠাৎ করে তার ঠিক সামনের সিটেই একজন মহিলা এসে বসলো। তার কোলে ২-৩ বছর বয়সের ফুটফুটে একটি ছেলে ঘুমিয়ে আছে।
প্রথম দর্শনে ভদ্র মহিলাকে জয় চিনতে পারলো না।তবে কেন জানি তার মনে হচ্ছে ভদ্র মহিলাকে সে হয়ত আগে কখনো দেখেছে।
দ্বিতীয়বার ভালোভাবে দেখে,জয় উনাকে চিনতে পারলো।
তিনি হল জয়ের সেই ক্লাসমেট নবনীতা।
যে মেয়েটি একসময় জয়ের সমগ্র হৃদয় আর ভাবনার জগতজোড়ে অবস্থান করতো।
আজ আর নবনীতার মধ্যে আগের মত সৌন্দর্যের ঝলখানি আর লাবণ্যতা নেই।একটি বাচ্চার মা হয়ে সেও যেনো বাচ্চা হয়ে গেছে। গোলগাল মুখমন্ডলের শ্যামলা রংয়ের যে মেয়েটি জয়কে বিমোহিত করেছিল আজ তার শীর্ণ দেহ,অমসৃণ ত্বক,মলিন মুখ আর এলোমেলো চুল দেখে সে অন্তঃপীড়া অনুভব করল।
নবনীতা জয়কে চিনতে পেরেছে কিনা সেটা জয় জানে না।
তবে আজ জয়ের তৃষ্ণার্ত মনের ভীষণ ইচ্ছে করছে ওর সাথে একটু কথা বলতে।
নবনীতা এখন আর আগের মত সুন্দর নেই।তবুও কেন জানি জয়ের কাছে তার গুরুত্ব বিন্দুমাত্র হ্রাস পায়নি।
প্রথম ভালবাসা বলে কথা।প্রত্যেক মানুষের কাছে হয়ত তার প্রথম ভালবাসার গুরুত্ব সর্বাধিক।
প্রায় পাঁচ বছর পর আজ নবনীতার সাথে জয়ের দেখা।
যে মেয়েটাকে দেখার জন্যে সে ফাঁকিবাজ ছাত্র হয়েও প্রতিদিন ক্লাসে আসতো।পরীক্ষার হল এ যাকে খাতা দেখাতে গিয়ে স্যারের কাছে ধরা খেয়েছিল বারংবার ।যার উদ্দেশ্য লিখিত চিঠি একবার বন্ধুদের হাতে পড়ায়, চিঠিটা ফেরত পেতে প্রতি বাক্যের জন্য ২০ টাকা করে জরিমানা দিতে হয়েছিল।যার ধরুন জয়কে জীবনের প্রথম বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করতে হয়েছিলো।
আমি মনে করি, মানুষের কাছে সবচেয়ে প্রিয় এবং অমূল্য সম্পদ হচ্ছে তার ফেলে আসা স্মৃতি।
আজ আবার নবনীতাকে দেখে জয় বয়ঃসন্ধিকালের সেই স্মৃতির সমুদ্রে অবগাহন করে ফেলে আসা অমূল্য স্মৃতির স্মরণ করে এক অনাবিল সুখের পাশাপাশি সমান অনুপাতে পীড়াও অনুভব করল।
জয় নবনীতাকে উদ্দেশ্য করে আস্তে করে বললো:নবনীতা?
নবনীতা জয়ের দিকে তাকিয়ে আপাদমস্তক দেখে বিস্মিত হয়ে একটু মিষ্টি হাসির সাথে বলল,তুমি জয় না?
জয়:চিনতে পেরেছো তাহলে, ভেবেছিলাম হয়ত চিনতেই পারবে না।
নবনীতা:নিজের বিশেষ কিছু ক্লামমেটদের কি আর সহজে ভোলা যায় নাকি। অধিকন্তু তুমি তো সারাক্ষণ আমার আশেপাশেই ঘুর-ঘুর করতে। আর কথা বলতে চাইলেই কোনো একটা বাহানা করে পালিয়ে যেতে আর নয়ত কেমন জানি অস্বাভাবিক হয়ে যেতে।সেজন্যে তোমাকে আমি বিশেষভাবে মনে রেখেছি।
জয় ক্ষাণিকটা মৃদু হাসির সাথে বলল,আচ্ছা ঠিক আছে, বাদ দাও তো ওসব কথা।আগে বলো,কেমন আছো তুমি?
নবনীতা:তুমি হয়ত জানো,এসএসসি পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল।আমার বর একটি কোম্পানিতে চাকরি করতো।এখনো তিনি এই চাকরির মাধ্যমে যে উপার্জন তা দিয়ে আমাদের ছোট্ট সংসার মোটামোটি ভালভাবেই চলে যাচ্ছে ।এইসবকে যদি তুমি সুখ মনে করো,তাহলে আমি সুখী এবং ভালই আছি।
অপরদিকে আমি বাবার বাড়িতে থাকাকালে যেমন পরাধীন ছিলাম, বিয়ের পর আমি আরও পরাধীন হয়ে গেলাম।সংসারের সবার মন রাখতে গিয়ে নিজের সুখকে বিসর্জন দিয়েছি।
স্বাধীনতাহীন কেউ আসলে ভালো থাকতে পারে না।
নবনীতা কৃত্রিম মৃদু হেসে জয়কে উদ্দ্যেশ্য করে বললো,আমার কথা বাদ দাও,তোমার কথা বলো তো:তুমি তো দেখছি অনেক বদলে গেছো।একসময়ের রোগাপাতলা ছেলেটা আজ অনেকটা পরিবর্তন হয়ে নায়কের ন্যায় নাদুসনুদুস হয়ে গেছে দেখছি।প্রথমে তোমাকে দেখে আমি তো চিনতেই পারিনি।
জয় হাসিমুখে বলল:তাই।আসলে পরিবর্তনশীলতাই তো জগতের নিয়ম।তুমিও কিন্তু আগের মত নেই,সেটা তুমি জানো?
নবনীতা:জানি।বাদ দাও ওসব কথা।আচ্ছা,বলো তো,আজকাল কি করতেছো তুমি?
জয়:তেমন কিছুই না।পড়াশোনা করতেছি।তারপর যদি একটা চাকরি পেয়ে যাই তাহলে বিয়ে করে ফেলবো। আমার জন্যে একটা মেয়ে দেখে দিও।
নবনীতা:আচ্ছা ঠিক আছে,দেখব নি।কোনোদিন সময় পেলে আমার বাড়িতে বেড়াতে আসিও।যদিও আমার বাড়ি বলতে তো আর কিছু নেই।আগে ছিলাম বাবার বাড়িতে।আর এখন থাকি স্বামীর বাড়িতে।
সামনের স্টেশনে নবনীতা নেমে যাবে। তাই ওর বাচ্চাটাকে ঘুম থেকে উঠিয়ে জয়ের কোলে দিল।
জয় নবনীতাকে জিজ্ঞেস করল:বাবুর নাম কি?
নবনীতা:না শোনার ভান করে, জবাব দিলো না।
জয় বাচ্চাটিকেই জিজ্ঞেস করল:তোমার নাম কি বাবা?
বাচ্চাটি অস্পষ্ট স্বরে বল:জয়।
জয় বুঝতে পারলো না, তাই বাচ্চাটিকে আবার জিজ্ঞেস করল:বল তো বাবা,তোমার নাম কি?
বাচ্চাটি এবার স্পষ্ট করে বলল:জয়।
তখনি জয়ের মাথায় যেন নক্ষত্র বিস্ফোরিত হয়ে পড়ল। স্ববিস্ময়ে অবাক হয়ে নবনীতার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো:নবনীতা,ওর নাম জয় রাখলে কেন?
কিন্তু নবনীতা জয়ের চোখে চোখ রাখতে পারছে না।সে অন্যদিকে তাকিয়ে বলল:তোমার এক বন্ধুর মারফত আমি জানতে পেরেছিলাম তুমি আমাকে ভালবাসো।আমিও তোমাকে পছন্দ করতাম। তাই তোমার নামে
আমার প্রিয় সন্তানের নাম রাখলাম।যাতে আমাদের অপরিপক্ক নিষ্পাপ ভালবাসা যেনো অমলিন থাকে চিরকাল ।
এই বলে নবনীতা গৌরীপুর জংশনে নেমে গেল।
জয় স্তব্ধ হয়ে তার সিটে বসে আছে। তার মুখ থেকে কোনো ধরনের কথা বের হচ্ছে না।সে জানালা দিয়ে যতক্ষণ পর্যন্ত দেখা যায় ততক্ষণ পর্যন্ত নবনীতার দিকে তাকিয়ে ছিল।কিছুক্ষণ পর ট্রেনটি গৌরীপুর স্টেশন ছেড়ে চলে গেল।
পরিশেষে আমি বলতে চাই, ভালবাসার মানুষকে জীবনসাথী করে না পেলেও তার প্রতি ভালবাসা শেষ হয়না বরং আরও বেড়ে যায়।প্রেমে বিরহ আছে বলেই হয়ত প্রেম এতটা সুন্দর এবং এর মাহাত্ম্য অধিক।
No comments