Header Ads

অগ্নিদেবের সাক্ষাৎকার -লিংকন ভদ্র

 আমি প্রফেসর সুকুমার সুভাষ।
 আমি একজন খুবই সাধারণ স্বশিক্ষিত বিজ্ঞানী।  অজানাকে জানার এক সীমাহীন তৃষ্ণা সর্বদা আমাকে নতুন কিছু জানতে প্ররোচিত করে।
আর সেজন্যেই গতবছর কিছুটা তৃষ্ণা লাঘব করার জন্যে আধ্যাত্মিক বিষয়ে জ্ঞান লাভের জন্যে সুদূর চীনে গিয়েছিলাম।
 চীনের তিব্বতের সাধুদের কাছ আধ্যাত্মিক উপায়ে বিভিন্ন দেবতাকে আহব্বান করে তাদের সাথে কথা বলার পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেছিলাম। আমার গুরু মংরা লামা অন্য কাউকে পদ্ধতিটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে  নিষেধ করেছেন।কারণ এরকম অলৌকিক শক্তি যদি  মন্দ লোকে আয়ত্ব করতে পারে,তাহলে মানবজাতির  অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে।
তাই আপনাদের অল্প করে বলছি।
পদ্ধতিটি হল নিম্নরুপ।
একাগ্র চিত্তে গভীর তিমিরে চন্দনকাঠ দিয়ে হুতাশন প্রজ্জ্বলিত করে একটি বিশেষ মন্ত্র পাঠ করে দেবতাদের আহব্বান করতে হয়।
৪ এপ্রিল ২০১৯,
ঢাকা শহরে সম্প্রতি বারংবার নিষ্ঠুরভাবে আগুনের লেলিহান শিখায় দগ্ধ হচ্ছে মনুষ্যজাতি।তাই এবিষয়ে অগ্নি দেবতার সাথে কিছু কথা বলার ইচ্ছা আমার দীর্ঘদিনের।
তাই আমি আজ আমার আধ্যাত্মিক সাধনাকে কাজে লাগিয়ে অগ্নি দেবতাকে আহব্বান করব।

এ অারাধনা অত্যন্ত কঠিন। তাই সবার দ্বারা এই কার্য সম্পাদক করা সম্ভব না।দেবতার সাথে কথা বলার সময় চোখ বন্ধ রাখতে হবে।
সমস্থ প্রক্রিয়া সফলভাবে  সম্পন্ন করার পর অগ্নি দেবতাকে প্রকাশ্যে আমাকে সাক্ষাৎ দেওয়ার জন্যে বারবার অনুরোধ করছিলাম।
কিছুক্ষণ পর আমার আশেপাশে কারো উপস্থিতি টের পেলাম।
আমি আকুল চিত্তে জিজ্ঞেস করলাম,
হে অগ্নিদেব, আপনি এসেছেন?
অগ্নিদেব:হ্যা, আমি এসেছি।আমায় কেন ডেকেছ,বল?

তখনি আমি উনাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,
হে অগ্নিদেবতা, মানুষ পুড়িয়ে  কি মজা পান, আপনি?
অগ্নিদেব:তুমি হয়ত জান,নয়ত জেনে নাও যে,আমার সাধারণ প্রাণীর ন্যায় কোনো ধরনের মজা বা সাজা পাবার মত অনুভূতিশক্তি নেই।তাই আনন্দ,দুঃখ,কষ্ট,জরা, ব্যাধি এসব আমাকে স্পর্শ করে না।
আমি কেবল আমার ধর্ম পালন করছি।
আমি:ধর্ম বলতে আপনি কি বোঝাতে চেয়েছেন?

অগ্নিদেব: ধর্ম' হচ্ছে কোন কিছুর অবস্থা, গুণ বা বৈশিষ্ট্য।
যেমনঃপানির ধর্ম তারল্য,চুম্বকের ধর্ম আকর্ষণ করা, আমার ধর্ম উত্তাপ এবং আলো প্রদান।
 ঠিক তেমনিভাবে প্রত্যেক মানুষেরও ধর্ম আছে।আর তা হচ্ছে মনুষ্যত্ব।আর মানুষ যদি তার নিজস্ব ধর্ম ভুলে গিয়ে  নিজেদের ক্ষতি করার হেতু আমাকে ব্যবহার করে, আমি তো সেখানে নিরুপায়।
আমি তো আর মানুষের মত স্বধর্মচ্যুত হতে পারি না।
আমি যদি  আমার স্বধর্মচ্যুত হই, তাহলে সভ্যতার বিকাশ থেমে যাবে।
মানুষ খুবই ভয়ানক প্রাণী ।বিশেষ করে তোমার বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ হচ্ছে বর্বর, অসভ্য,অসামাজিক যারা সামান্য কিছু খরচ কমানোর জন্যে অগ্নি প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহন করে না।অপরদিকে, সাধারণ মানুষ  ঝুঁকিপূর্ণ ভবন জেনেও তারা প্রতিবাদ না করেই সেখানে প্রতিদিন  কাজ করতে যায়।
অবৈধ এবং অনিরাপদ বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়া তো মানুষের নিত্য দিনের অভ্যাস।

তুমি হয়ত জান যে, জ্বালানি,জারক পদার্থ (অধিকাংশ ক্ষেত্রে অক্সিজেন) এবং তাপ এই ৩ টি জিনিসের উপস্থিতিতে জ্বলতে আমি বাধ্য।
মানুষ যদি নিজের মৃত্যুকুপ নিজেই নির্মাণ করে তাতে আমার আসলে  কিছুই করার নাই।

আমি অাবারও অগ্নিদেবকে উদ্দেশ্য করে বললাম:আপনার নিকট আমার বিনীত অনুরোধ,আপনি মানুষকে  দগ্ধ করা থেকে বিরত থাকুন।মানুষের স্বজন হারানোর কান্না আর সহ্য করতে পারছি না।
অগ্নিদেব:মানুষ হচ্ছে সর্বভুক এবং সবচেয়ে স্বার্থপর   প্রাণী। যে কিনা শুধু নিজের কথা সবার আগে ভাবে।আমি কিন্তু মানুষ নই। আমার কাছে ক্ষুদ্র অণুজীব থেকে নীল তিমি পর্যন্ত  সকল প্রাণীর মর্যাদা সমান।আমি প্রাণীদের উচ্চবর্ণ বা নিম্নবর্ণে বিভাজন করি না। এসব তো মানুষের কাজ।
 ধরে নাও, আমি আমার ধর্মে কিছুটা পরিবর্তন করে যদি প্রাণী পোড়ানোকে নিষিদ্ধ করি তাহলে কি ঘটবে জানেন?
তখন মানুষ কোনো প্রাণীর মাংস রান্না করে খেতে পারবে না,কোনো গাছের কান্ড জ্বলানি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না।
 আমি:আমরা তো বেশির ভাগ সময়ই মরা গাছের কান্ড দিয়ে মরা বা মারার পর পশুর মাংস রান্না করে খাই।
তার মানে হচ্ছে আমরা জীবন্ত প্রাণী পোড়িয়ে হত্যার পক্ষে নই।
আপনি কি জীবন্ত প্রাণীদেরকে না পোড়ানোর শপথ নিতে পারবেন?
অগ্নিদেব: আমি যদি জীবন্ত প্রাণীদের না পোড়ানোর শপথ করি, তাহলে মানুষ আরও বড় বিপদে পড়বে।
আমি:সেটা কিভাবে?
অগ্নি:মানুষ যেসব খাবার রান্না করে খায়, সেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে জীবন্ত অত্যন্ত ক্ষতিকর জীবাণু রয়েছে। আমি যদি তাদের পুড়িয়ে হত্যা না করি তাহলে মানুষ নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে অল্পবয়সে মারা যাবে। এমনকি, মানুষ সেসব জিনিস  রান্নার জন্যে ব্যবহার করে থাকে, সেসকল জিনিসের শারীরিক মৃত্যু ঘটলেও এদের কোষ জীবন্ত থাকে অনেকক্ষণ পর্যন্ত । এর ফলে চুলায় আগুন জ্বললেও, যতক্ষণ পর্যন্ত একটি কোষও জীবন্ত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত রান্নার জিনিসে আগুনের প্রভাব পড়বে না।
 রান্না হতে অনেক সময় লাগবে। খরচ হবে প্রচুর জ্বালানি।উপবাস থাকতে হবে মানুষকে।

অগ্নিদেব আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল,কাউকে তার স্বধর্মচ্যুত হতে বলবা না।কারণ এতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
আমাকে আমার ধর্ম পালন করতে দাও আর তোমরা নিজেদের ধর্ম ঠিকভাবে পালন কর। তাহলে দেখবে জীবন অনেক সুন্দর এবং স্বাস্থ্যকর  হয়ে উঠবে।

অবশেষে আমি নিজেই নিজেকে উপহাস করে বললাম, অগ্নিদেব তো ঠিকই বলেছেন।
আমরা আমাদের মরণের ফাঁদ নিজেরাই তৈরি করি আর দোষ দেই সরকার আর ঈশ্বরকে।
তার মানে সরকার কি নির্দোষ?
সেরকমটাও নয়, সরকার তো আমাদেরই। আমরা যদি সম্মিলিতভাবে নিজেরা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিই বা সরকারের কাছে কোনো দাবী উত্থাপন করি তাহলে সাফল্য আসবেই।
আপনি হয়ত জানেন নয়ত জেনে নিন,মাস খানেক আগে চকবাজারে ভয়াবহ অগুনে ৮১ জনের মৃত্যুর পর সরকার সেখান থেকে রাসায়নিক পদার্থ অপসারণ করতে চেয়েছিল।
কিন্তু স্থানীয় জনগণ আর ব্যবসায়ীরা করতে দেয়নি।

তাহলে দোষ কার?

পরিশেষে বলতে চাই, ছোট একটা দেশে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ যেখানে চললাম, মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ণ সেখানে কষ্টকর হবে সেটাই স্বাভাবিক।
সরকার যদি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেয়, তাহলে এদেশের জনগনই সরকারের বিপক্ষে আন্দোলনে নামবে।
তাহলে সরকার কি করবে???
তবুও সরকারকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.