ভোর রাতের আতঙ্ক -রাজন চন্দ্র দেব
আমার গ্রামের পাশেই চালের মিল আছে।
সেই মিলে সদ্য আগত কর্মচারী বিমল নামের একটি ছেলের সাথে গতকাল আমার পরিচয় হয়েছিল।
রাত ১১:৩০,
মোবাইলে সিনেমা দেখছিলাম।হঠাৎ বিমলের ডাক শুনে বাইরে বেড়িয়ে এলাম।এসে দেখি,
বিমল আমার উঠানে দাড়িঁয়ে জাল, কঞ্চি এবং মাছ ধরার ঝুড়ি ইত্যাদি গোছাচ্ছে।
কাল ভোরে নাকি সে আমাকে নিয়ে মাছ ধরতে যাবে।
আমি বিমলকে সরাসরি বলে দিলাম,আমি মাছ-টাছ ধরতে পারি না।
বিমল তিরস্কারের স্বরে আমাকে বলল, গ্রামের ছেলে হয়ে মাছ ধরতে পারিস না।
আমি চুপ করে থাকলাম।
বিমল কিছুক্ষণ বিড়বিড় করতে করতে চলে গেল।
আপনারা হয়ত ভাবছেন আমি সত্যিই মাছ ধরতে পারি না।আপনাদের ভাবনা সত্যি নয় বরং একং সময় মাছ ধরতে আমি ভীষণ পছন্দ করতাম।
একটি ভয়ানক স্মৃতি আমার মাছ ধরার শখকে বিলীন করে দিয়েছে।
কি সে ভয়ানক ঘটনা?
প্রায় দুই বছর আগের কথা।তখন এই ধানের মিলটি স্থাপিত হয়।এই মিলের কর্মচারী গণের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়।আমার মত গণেশও মাছ ধরতে ভীষণ পছন্দ করে।
তাই আমরা প্রতিদিনই ভোরে মাছ ধরতে যেতাম। অন্যন্য নেশার মতই, মাছ ধরাও এক আলাদা রকমের নেশা সেটা এই নেশা যাদের আছে তারা অবশ্যই বুঝতে পারবে।
ভালই চলছিল আমাদের মাছ ধরার অানন্দ।
একদিন রাতে গণেশ বেশ ক্ষাণিক্ষণ আগে এসেই আমাকে ডাকছে।
আমি বললাম এত তাড়াতাড়ি কেন?
কাল নাকি তার ছোটবোনকে বরপক্ষ দেখতে আসবে তাই প্রচুর মাছ শিকার করতে হবে।
আমি ঘুম থেকে উঠে আলো জ্বালাতে চেষ্টা করলাম কিন্তু বিজলি ছিল না।
তাই অন্ধকারে ঠাহর করে কোনো রকমে মাছ ধরার সামগ্রী খোঁজে নিয়ে শোবার রুম থেকে বের হলাম।
মোবাইলে চার্জ ছিলো না। তাই মোবাইল টা রেখেই বের হলাম। চাঁদের আলোতে পথ চলতে খুব একটা সমস্যা হবে না।
আজ গনেশ আমার সাথে খুব একটা কথা বলছে না।
যে গনেশ সারাক্ষণ ক্রমাগত বকবক করতেই থাকে আজ যে চুপচাপ শ্মশানঘাটেরর পাশে যে বিলটা আছে ঔইদিকে যাচ্ছে।
আমি গনেশকে বললাম,, কিরে গণেশ ঔদিকে যাচ্ছিস কেন?
গণেশ উত্তর দিল:ঔইদিকে প্রচুর মাছ আছে।
গণেশের কণ্ঠস্বর কেমন জানি পরিবর্তন হয়ে গেছে।
আমার কিছুটা ভয় লাগতে শুরু করল।
গণেশ আমার দিকে না তাকিয়ে শ্মশানঘাটের পানে হেঁটে চলল।
আমি লক্ষ্য করলাম গণেশ আজ বিড়ি টানছে না। যে গণেশের বিড়ি ছাড়া এক দন্ড চলে না আজ কেন সে বিড়ি খাচ্ছে না, ব্যাপারটা সন্দেহজনক।
আমি মনে মনে ভয় পেয়েও ওকে বুঝতে না দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কিরে গণেশ আজ তুই বিড়ি খাচ্ছিস না কেন?
গণেশ তার ভয়ানক স্বরে বলল,আরে এত কথা বলিস কেন,শেষ হয়ে গেছে তাই খাই না।
আজ বিড়ি খাই না বলে আমার কাছে দিয়াশলাই নাই। যদি থাকত তাহলে পরীক্ষা করতে পারতাম গনেশই ভূত কিনা।
আমি নিশ্চিত নই যে গণেশই ভূত। তাই একটু একটু ভয় পেলেও খুব বেশি ভয় পাচ্ছি না।
শ্মশানঘাটের পাশের বিলটিতে নেমে গণেশ গভীর জলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আর আমাকে বলছে তার পিছু পিছু আসতে।
এখন আমি ভীষণ ভয় পেয়ে গেলাম।কারণ যে গণেশ সাতাঁর না জানার কারণে জলে নামতে খুব ভয় পায়।
আজ সে গলা পানিতে নেমে গেছে আর আমাকে বলছে
জালটা নিয়ে আয়। আমরা আজ গভীর পানিতে মাছ শিকার করব।
আমি লক্ষ্য করলাম সে ডুবে গিয়েও আমাকে বলছে জালটা নিয়ে আয়, আজ আমরা গভীর পানিতে মাছ শিকার করব।
আমার বুঝতে আর বাকি রইল না যে, সে গণেশ হতে পারে না, সে অবশ্যই গণেশরুপী ভূত।
আমার শিরদাঁড়া দিয়ে যেন ঠান্ডা প্রবাহ বয়ে গেল।
এর পর আর কিছুই মনে ছিল না আমার।
পরদিন সকালে যখন জ্ঞান ফিরল, তখন আমি আমার বিছানায় শুয়ে আছি আর পাশে বসে আছে গণেশ।
আমার জ্ঞান ফিরতেই গণেশ আমাকে বলল,আমাকে না নিয়ে মাছ ধরতে কেন গেছিলি।
ভোরে তোরে ডাকতে আসলে তোর মা বলেছিল, তুই নাকি মাছ ধরতে চলে গেছিস।তারপর তোকে শশ্মানঘাটের পাশে অজ্ঞান অবস্থায় পেলাম।
কি হয়েছিল তোর?
গনেশকে সবকিছু বললাম।
এই দিনের পর থেকে আমি আর গণেশ আর কোনোদিনই গভীররাতে মাছ ধরতে যাই না।
No comments