Header Ads

লালসার পরিণাম -লিংকন ভদ্র


 
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর অজস্র রহস্যেঘেরা এই ধরিত্রীতে লৌকিক-অলৌকিক নানান ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে নিরন্তর।আর ঠিক এই কারণেই  এই পৃথিবী  আমার নিকট অধিক প্রিয়।
আজ আপনাদের যে অলৌকিক কাহিনীটি বলতে চলেছি,সেটি বেশিরভাগ মানুষের কাছে হয়ত অযৌক্তিক মনে হতে পারে এবং সেটাই স্বাভাবিক। যার গল্পটা আপনাদের বলতে চলেছি, তার নাম অনিরুদ্ধকর অনিক।
 ১২ জুন ২০১৯,
 আজ অনিকের  ২২তম বছর পূর্ণ হলো।আর এই বয়সে তার জীবনের যৌবনরথ পূর্ণগতিতে চলতে শুরু করেছে।
সে সাধারণত  অনেকটা চাপা-স্বভাবের লাজুক প্রকৃতির ছেলে।সে তার সমস্ত আবেগ আর চাওয়া-পাওয়াকে যথাসম্ভব নিজের মধ্যে চাপা দিয়ে রাখার চেষ্টা করে সবসময় । তবে সাধারণত, তার মতো চাপা স্বভাবের সুবোধ ছেলেদের মনের মধ্যে  প্রেম করার আগ্রহ  একটু বেশিই থাকে।তবে এই গল্পের নায়ক অনিক একটু ব্যতিক্রম। তার একটি  বড় সমস্যা হলো, সে যেমন তেমন কোনো মেয়েকে পছন্দ করে না।মানে হলো, তার প্রেমিকা হতে হলে মেয়েকে যথেষ্ট সুন্দরী এবং বুদ্ধিমতী হতে হবে।তাই  সে তার পছন্দের কাউকে খোঁজে পায়নি এখনো পর্যন্ত।আর দুই একজনকে পেলেও,  বেশী সুন্দরী হওয়ার কারণে মেয়েরা তাকে পাত্তাই দেয় না।

আজ বিকেলের দিকে হঠাৎ করে  অনিকের বাড়িতে অদ্ভুত  ভয়ংকর চেহারার অধিকারী  একজন  তান্ত্রিকবাবা এসে হাজির হলো। এর ফলে বেশ কয়েকজন গ্রামের মানুষ তার বাড়ির উঠানে এসে জটলা পাকালো।
তান্ত্রিকবাবা দাবী করছেন যে,
 তিনি নাকি মানুষের ইচ্ছে পূরণ করতে পারেন।
অনিকের গ্রামে শিক্ষিত এবং সচেতন মানুষের সংখ্যা  আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।তাই তার গ্রামের লোকজন আজকাল এসব তন্ত্র-মন্ত্রে মোটেও বিশ্বাস করেন না। ফলে তারা সবাই একজোট হয়ে তান্ত্রিকবাবাকে অপমান করতে লাগলো। কেউ কেউ আবার অতি উৎসাহী হয়ে উনাকে মারতে তেড়ে যাচ্ছিল।
বিষয়টা অনিকের কাছে ভীষণ খারাপ লাগলো।সে দৃঢ়ভাবে  গ্রামের সকলের উদ্দেশ্যে বললো,
কোনো কিছুতে বিশ্বাস করা বা না করা  হচ্ছে প্রত্যেকের একান্তই  ব্যাক্তিগত ব্যাপার। আপনারা বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, তার জন্যে উনাকে অপমান বা গায়ে হাত তোলার অধিকার তো আপনাদের নেই।
একথা শোনে গ্রামের মানুষ যার যার মতো চলে গেলো।

অনিক  তান্ত্রিকবাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল: হে সাধক মহাশয়, চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।
সাধক  রাগান্বিত কণ্ঠে জবাব দিলো: তার আর দরকার হবে না। আমি একাই চলে যাবো। 
অনিক কিছুটা বিব্রত হয়ে বলল: আপনি সাধক মানুষ। রাগান্বিত হওয়া আপনাকে মানায় না।জগৎ এবং  জীবনের বিচিত্র রুপের রহস্য তো আপনার অজানা নয়।আপনি তো নিশ্চয় অবগত আছেন, 
চারিদিকে আজকাল ধর্মের মুখোশ পড়ে মানুষ যে হারে
জালিয়াতি,  ধর্ষণ আর অন্যায় কাজ করে চলেছে, তার ফলে মানুষের উপর মানুষের বিশ্বাস আর শ্রদ্ধা পূর্ণরূপে বিলিন হয়ে গেছে।
দয়া করে আমার গ্রামবাসীদের ক্ষমা করে দিবেন।

সাধক মুসকি হেসে জবাব দিলেন:কিছুটা রাগান্বিত হয়েছিলাম বটে।তবে তোমার কথা শোনে আমার প্রাণ শীতল হয়ে গেছে এবং রাগও বিলিন হয়ে গেছে।
চলো আমাকে আমার রাস্তা দেখিয়ে দাও।
পথে যেতে-যেতে তান্ত্রিকবাবা অনিকের নাম জেনে নিলো এবং তাকে  উদ্দেশ্য করে বলল:
আচ্ছা অনিক, তুমিও  কি আমাকে ভন্ড মনে করো?

অনিক:কোনো বিষয় সঠিকভাবে না জেনে সে ব্যাপারে মন্তব্য করার সাধ্য আমার নেই।তবে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করলেই ভরসা করতে পারছি না।কারণ আপনি যে বিষয়ের অবতারণা করেছেন তা বাস্তবে পরিণত করা  অসম্ভব। 

তান্ত্রিকবাবা মৃদু হেসে বলল:তোমার উত্তর আমার পছন্দ হয়েছে।
তবে যদি তুমি  চাও তাহলে আমি কিন্তু তোমার ইচ্ছা পূরণ করতে পারি।
অনিক সবিস্ময়ে  জবাব দিল:
এরকমটা কি সত্যিই সম্ভব?
তান্ত্রিকবাবা :অবশ্যই সম্ভব। অলৌকিক ঘটনাসমূহ আমরা শুনে মজা পাই।কিন্তু নিজের জীবনেও যে ঘটতে পারে সেরকমটা আমরা বিশ্বাস করতে চাই না।

অনিক মনে মনে নিজেই নিজেকে বলল:
 একটু পরীক্ষা করে দেখি তো তান্ত্রিকবাবার ক্ষমতা।তাতে লাভ না হলেও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা তো আর  দেখছি না। 
সে তান্ত্রিকবাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল:তান্ত্রিকবাবা আমি আমার একটি ইচ্ছা পূরণ করতে চাই।

তান্ত্রিকবাবা বলল:আচ্ছা ঠিক আছে।তবে মনে রেখো তোমার ইচ্ছা যেন পার্থিব সীমানা অতিক্রম না করে।এমনকি এমন কোনো ইচ্ছা পূরণের প্রয়াস করিও না, যার যোগ্য তুমি নও।যদি সেরকমটা কর তবে তোমাকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে।এমনকি তোমার জীবন  দিয়ে এর মূল্য পরিশোধ করতে হতে পারে।আর মনে রেখো এ ব্যাপারে আমি ছাড়া অন্য কারো সাথে আলোচনা করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
অনিক:আমি আপনার শর্তে রাজী আছি।

তান্ত্রিকবাবা অনিকের কাছে এসে তার  কানে-কানে  একটি বীজ মন্ত্র পাঠ করে এবং জানতে চায়, শুনেছো তো?

অনিক মাথা নেড়ে সম্মতিসূচক ইশারা দেয়।

তান্ত্রিকবাবা :আমার দেওয়া বীজ মন্ত্র কাউকে বলিও না এবং ঠিক রাত ১২ টার পর চোখ বন্ধ করে একমনে এই মন্ত্র জপ করতে থাকলে ইচ্ছা পূরণের দেবতার সাথে তোমার সাক্ষাৎ হবে।   এর ব্যতিক্রম  করিও না, যদি কর তাহলে তোমার মৃর্ত্যু পর্যন্ত হতে পারে ।
অনিক:ঠিক আছে।
হাঁটতে হাঁটতে তারা গ্রামের শেষ সীমানায় এসে পড়েছে এবং অনিক তান্ত্রিকবাবাকে তার নতুন পথ সম্পর্কে বলে দিয়েছে।  বিদায় দেওয়ার সময় তান্ত্রিকবাবা  শেষবারের মতো অনিককে পুনরায় সতর্ক করে বলে গেল যে,সাবধান নিয়মের ব্যতিক্রম করিও না। তাতে ভয়ানক পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে।

অনিক:আপনার কথা আমি স্মরণে রাখবো। বিনম্রচিত্তে প্রণাম করে তান্ত্রিকবাবাকে সে বিদায় জানালো।
অনিকের মনে কিছুটা ভয়, কিছুটা আনন্দ আর চাপা উত্তেজনায় সে কেবল শুধু রাত ১২ ঘটিকার  অপেক্ষা করতে লাগলো।
এই যুগে সত্যিই কি এরকমটা সম্ভব।প্রকৃতপক্ষে সে মন থেকে এসব বিশ্বাস করতে পারছে না।
এসব চিন্তা করে অনিক নিজের উপর নিজেই বিদ্রোপের হাসি হাসতে লাগলো এবং বলতে লাগলো দেখি বেটা তান্ত্রিকের মন্ত্রের  ক্ষমতা কতটুকু।
১৩ই জুন,২০১৯
অনিক রুমে একাই থাকে। সবে ঘড়িতে রাত ১২ টা বেজে ১ মিনিট।
তার আর তর সইছে না। সে দেখতে চায় আসলেই এই মন্ত্রের সত্যিই কোনো উপযোগ আছে কিনা?
সে বিছানায় বসে একমনে চোখ বুঝে বীজ মন্ত্র ঝপ করতে  লাগলো।
ক্ষাণিকক্ষণ পরে আকাশে এক বিকট শব্দের বজ্রপাতের সাথে সাথে দৈববাণী হল,
 হে মানব আমি ইচ্ছা পূরণের দেবতা।
বল, তোমার কি ইচ্ছা?
অনিক : অনিক মনে-মনে ভাবতে লাগলো, কি চাওয়া যায়।সে কিছুক্ষণ ভেবে ঠিক করলো যে,সে একজন অপরূপ সুন্দরী প্রেমিকা চায়।এই বয়সে এরকম চাওয়া অস্বাভাবিক নয়।

 আবার দৈববাণী হলো,কেমন প্রেমিকা চাও তুমি?

অনিক:অনিক মনে-মনে  নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো, সুযোগ যেহেতু পেয়েছি, তাহলে  সাধারণ কাউকে কেন চাইবো?সে তান্ত্রিকবাবার সকল সতর্কবাণী ভুলে গিয়েছে।
সে ইচ্ছে পূরণের দেবতাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
আমার প্রেমিকার হাসি যেন হয় নায়িকা সামান্থা রুথ প্রভুর  মতো, তার কোমর যেন হয় তামান্না ভাটিয়ার মতো,তার আঁখির মায়াভরা  চাউনি যেন হয় শ্রদ্ধা কাপুরের মতো।

অন্তিম দৈববাণী হলো ,
আচ্ছা ঠিক আছে।যেমন তোমার ইচ্ছে ঠিক তেমনই হবে।কিছুক্ষণের মধ্যে তোমার  ইচ্ছে অবশ্যই  পূরণ হবে।তবে তুমি যেরকম মেয়ে কামনা করেছো, সেরকম মেয়ে এই পৃথীবীতে নেই।সেরকম মেয়ে কেবল তোমার স্বপ্নেই বসবাস করতে পারবে।তাই তোমার প্রেমিকা তোমার স্বপ্নরাজ্যের রাণী হয়ে থাকবে চিরকাল। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।সময়মতো তোমার প্রেমিকা তোমার স্বপ্নে চলে আসবে।তবে এর জন্য তোমাকে চরম মূল্য দিতে হবে। তার জন্য  প্রস্তুত থেকো।
অনিক পুনরায় চিৎকার করে দেবতাকে জিজ্ঞাসা করলো,
 কিরকম মূল্য বা কি প্রকারের প্রস্ততি?
আর কোনো উত্তর এলো না।চারদিক ক্রমান্বয়ে শান্ত হয়ে এলো।

অনিক একটু ভয় পেলো এবং ক্ষাণিকক্ষণ পর গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন হলো।
আজকের নিদ্রায় তার এক অন্যরকম অনুভূতি হতে লাগলো।সে যেন কোনো এক অজানা রাজ্যে প্রবেশ করেছে।বর্তমানে পৃথিবীতে ভরা গ্রীষ্মকাল হলেও এই নতুন জায়গায় যেন অমলিন চিরবসন্ত বিরাজমান।
স্বপ্ন হলেও অনিকের কাছে কেন যেন সবকিছু  বাস্তবের
মতো মনে হচ্ছে।সে দাঁড়িয়ে আছে একটি বাগিচায়। যার মধ্যে ফুটে আছে হরেক  রংয়ের অপরিচিত সুগন্ধি ফুল।বাগিচার  চারপাশে মৃদু স্রোতের নীল পানির সরু নদী বহমান।
অনিক হঠাৎ করে একজন ললনার মিষ্টি কণ্ঠস্বর শুনতে পেল।এক অজানা তরুণী তার সুমধুর স্বরে থেমে থেমে তার নাম ধরে ক্রমাগত  ডেকে চলেছে।
বাগিচার পাশের  নদীর তটের একটি ছোট্ট ডিঙি নৌকা থেকে সে আওয়াজ ভেসে আসছিল।
কোনো এক অজানা মোহের আকর্ষণের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অনিক ক্রমান্বয়ে সে নদীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিছুটা এগিয়ে সে দেখতে পেল যে, ছোট ডিঙিটাতে বসে নদীর পানিতে  দুই পা ডুবিয়ে নীল শাড়ী পড়া একটি মেয়ে পানির সাথে খেলা করছে।
অনিক:কে তুমি?
 তোমার সুমধুর স্বরে  কেনই বা ডাকছো  আমায়?
মেয়েটি ধীরে ধীরে মুখ তোলে অনিকের দিকে তাকালো।মেয়েটিকে দেখে অনিকের মাথা  ৩৬০ ডিগ্রি  ঘুরে গেল। এ তো সেই মেয়ে যাকে  মন্ত্রবলে সে কামনা করেছিল । 
আকস্মাৎ এরকম পরিস্থিতিতে পড়ে, অনিকের শরীর স্তব্ধ হয়ে গেল এবং পা যেন পাথরেরর ন্যায় অচল হয়ে গেছে।
তার মুখ দিয়ে কোনো ধরণের কথা বের হচ্ছে না। সে পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইল এবং ভাবতে লাগলো এরকমটা কি সত্যিই আমার সাথে ঘটছে?
এরকমটা কি সত্যিই  সম্ভব?

মেয়েটি অনিকের দিকে আস্তে- আস্তে অগ্রসর হতে-হতে বললো, আমার নাম সাতাশ্রী। তোমার পছন্দের তিন নায়িকার নামের প্রথম বর্ণ দিয়ে এই নাম তৈরি করেছি আমি স্বয়ং।

অনিক এখনো মনে করছে এটা অবশ্যই  স্বপ্ন।এরকমটা
কখনো সম্ভব নয়।
 ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে হয়তো সব বিলিন হয়ে যাবে।কিন্তু সে হঠাৎ খেয়াল করলো,এই স্বপ্নরাজ্যেও  বাস্তবের ন্যায় তার পঞ্চইন্দ্রীয় স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে।যা বাস্তবে অসম্ভব। 
সাতাশ্রী অনিকের কাছে এসে অনিকের কাঁধে আস্তে করে তার কুসুমের ন্যায় কোমল ডান  হাতখানা রাখলো এবং অনিকের চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে  বললো,তুমি বিশ্বাস করে নাও যে, আমিই তোমার সেই প্রত্যাশিত প্রেমিকা।আমি কেবল তোমার ইচ্ছে পূরণের জন্যেই সৃষ্টি হয়েছি।তোমার এই স্বপ্নরাজ্য আর মনের রাজ্যের একমাত্র মহারাণী আমি স্বয়ং ।আমাকে ছেড়ে তুমি  থাকতে পারবে না।

এসব কথা শুনে অনিক নির্বাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইল।
মেয়েটিও চুপ করে রইল।তবে মাঝে মাঝে তার ভুবন ভুলানো মিষ্টি হাসি অনিকের হৃদয়ে ঝড়ের সঞ্চার করে।যে ঝড়ে অনিক সারাজীবন আন্দোলিত হতে চায়।
ক্ষাণিকক্ষণ পরে অনিক একটু স্বাভাবিক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
তুমি কি সত্যিই আমার মত একজন  নগণ্য  মানুষকে ভালোবাসো?
সাতাশ্রী মিষ্টি হেসে জবাব দিল,
তুমি বিশ্বাস করো আমি কেবল তোমার জন্যেই সৃষ্টি এবং শুধু তোমার জন্যেই তোমার স্বপ্নরাজ্যে তোমার প্রতীক্ষা করবো সমগ্রজীবন।প্রতিদিন রাত ১২ টার পর তোমার স্বপ্নরাজ্যে প্রবেশ করবো তোমার প্রেমের নেশা হয়ে।
একথা বলেই মেয়েটি তার কুসুম কোমল দুই হস্ত দ্বারা অনিককে জড়িয়ে ধরল।

এর ফলে, অনিকের শরীরে যেন এক  অদ্ভুত শিহরণ খেলে গেলো।তার ২২ বছরের চাপা আবেগ যেন আজ বিস্ফোরিত হয়ে এক নতুন সুখের পৃথিবী নির্মাণ করেছে।
তার ভীষণ ভালো লাগতে শুরু করেছে।এরকম আনন্দ আর সুখ তার জীবনে সে কখনো পায়নি।এরকম পরিস্থিতির ভিন্ন ধরনের সুখ এবং আনন্দের মাত্রা কারো পক্ষে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।অনিকের কাছে মনে হচ্ছে,  এমন অপার্থিব সীমাহীন  সুখের  জন্যে সে তার সর্বস্ব বিসর্জন দিতেও হয়তো দ্বিধাবোধ করবে না।

হঠাৎ অনিক অনুভব করল তার চোখে-মুখে  পানির উপস্থিতি। একটু পরেই সে কারণটা বুঝতে পারলো।সকাল ১১ টা বাজে, এখনো সে ঘুমাচ্ছে। তাই তার ছোট বোন টুনি তার উপর পানিভর্তি বালতি ঢেলে দিল।
এরকম অভিজ্ঞতা অনিকের প্রায়ই হয়।বাদরের ন্যায় ছোটবোন থাকলে যেমনটা হওয়া স্বাভাবিক।
 এতে তার কোনো ভাবনা নেই।বরং তার দুশ্চিন্তার প্রধান কারণ হচ্ছে,গতরাতের স্বপ্ন।
অনিক অনুভব করল, তার শরীর হঠাৎ করে অনেকটা  দুর্বল হয়ে পড়েছে।সে শরীরে বেশি শক্তি পাচ্ছে না।গত রাতটা সে স্বপ্ন দেখে কাটিয়েছে।তাই ঘুম হয়তো  ঠিকঠাক হয়নি।এই কারণেই হয়ত এরকম লাগছে।তবে সকল সমস্যা সত্ত্বেও,  তার সমস্ত ভাবনা জোড়ে শুধু গতরাতে  সেই স্বপ্নে দেখা মেয়েটি।
ঔইদিন থেকে সে শুধু রাত ১২ ঘটিকার অপেক্ষায় থাকে 
এবং সে তার স্বপ্নের রাণী সাতাশ্রীর সাথে মধুর সময় অতিবাহিত করা তার জীবনের নিত্য অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
এভাবে কয়েকদিন চলার পর অনিকের শরীর অনেক বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছে।কারণ এই স্বপ্ন কেন জানি তার জীবনীশক্তি ক্রমান্বয়ে শুষে নিচ্ছিল। সারারাত স্বপ্ন দেখার পর,দিনে কিছুক্ষণ ঘুমায় আর বাকিটা সময় শুধু ঔই মেয়েটার কথাই  ভাবে।
তবে অনিক বিষয়টা বুঝতে পারলো যে, সাতাশ্রীর সাথে স্বপ্নে সাক্ষাৎ তাকে কিছুটা সুখ প্রদান করলেও, বিনিময় মূল্য হিসেবে সাতাশ্রী তার প্রাণশক্তি শুষে নিচ্ছে ।তবে তান্ত্রিকবাবার আদেশের কারণে সে এই বিষয়ে অন্য কাউকে কিছুই  বলতে পারছে না।
সম্প্রতি অনিকের বাবা-মা বিষয়টা লক্ষ্য করলো এবং শহরে গিয়ে অনিককে একজন বড় ডাক্তার দেখালেন। কিন্তু ডাক্তার মহাশয় কোনো রোগ সনাক্ত করতে পারলেন না।
এদিকে দিন দিন অনিকের অবস্থা আরও খারাপ হতে লাগলো।
সাতাশ্রীর প্রেম  ক্রমান্বয়ে অনিকের সমস্ত জীবনীশক্তি শুষে নিচ্ছে।এতে অনিকের কিছুই করার নেই।সে প্রতিদিন  সকাল হতেই   সাতাশ্রীকে স্বপ্নে না দেখার দৃঢ় পণ করে।কিন্তু সন্ধ্যা নামার সাথে-সাথে সাতাশ্রীর প্রতি তার আগ্রহ যেন জ্যামিতি হারে বাড়তে থাকে।এ কিরকম মায়া যা অনিক কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না।তবে অনিক এটা বুঝতে পেরেছে যে, সে ক্রমান্বয়ে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে।তবুও সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে তার মনে হয়,  তার প্রেমের এই ভয়ংকর নেশার আনন্দের কাছে তার নিজের জীবনকেই তুচ্ছ মনে হয়।মারাত্মক ক্ষতি হবে জেনেও মাদকাসক্ত ব্যক্তি  যেমন মাদকদ্রব্য সহজে ছাড়তে পারে না। অনিকের নেশাও কিছুটা সেরকম বা তার থেকেও ভয়ানক।
  সকাল হলেই তার কৃতকর্মের জন্য নিজেকে তিরস্কার করে আর রাত হলেই প্রেমের নেশা যেন থাকে পেয়ে বসে এবং সে জীবন দিয়ে হলেও সাতাশ্রীর সান্নিধ্য চায়।
এ প্রক্রিয়া ক্রমাগত চলছেই।
এদিকে অনিক ভীষণ অসুস্থ হয়ে গেছে।হয়ত বেশিদিন বাঁচবে না।
ডাক্তার দেখিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না।তাই অনিকের বাবা-মা আশা ছেড়ে দিয়েছেন।

অনিকের এই অবস্থায় হঠাৎ করে তার বাড়িতে সেই তান্ত্রিকবাবার আগমন।

অনিকের বাড়িতে এসেই তিনি অনিকের নাম ধরে  ডাকতে লাগলেন।
অনিকের বাবা-মা ঘর থেকে বের হয়ে  এসে তান্ত্রিকের কাছে জানতে চাইলো,
কেন তিনি অনিককে ডাকছেন?
তান্ত্রিক:ও কেমন আছে খোঁজ নিতে এসেছি।কেমন আছে, অনিক?
একথা শুনে অনিকের মা তার অশ্রুসিক্ত দুনয়ন মুছতে মুছতে জবাব দিল,
তান্ত্রিকবাবা, আমার অনিকের কি জানি হয়েছে।ডাক্তাররা রোগ সনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছেন।আমার অনিক হয়ত আর বেশিদিন  বাঁচবে না।
তান্ত্রিক মনে মনে কি যেন একটা ভাবলো।তারপর বিড়বিড় করে বলতে লাগল,নিশ্চয় অনিক আমার দেয়া বীজ মন্ত্রের ভুল ব্যবহার করেছে।
আমাকে অনিকের কাছে নিয়ে চলুন।

অনিকের মা-বাবা তান্ত্রিকবাবাকে  নিয়ে অনিকের কক্ষে প্রবেশ করল। অনিকের  রুগ্ন স্বাস্থ্যের করুণ  অবস্থা দেখে তান্ত্রিকবাবা ভীষণ অবাক হওয়ার পাশাপাশি  অনেক দুঃখও পেলেন।
অনিক চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল।অনিকের মা অনিককে ডেকে দিল।
 অনিক চোখ খোলে তান্ত্রিককে দেখেই চিনতে পারলো এবং কোনোরকমে  বিছানা থেকে উঠে তান্ত্রিকের পায়ে পড়ে কাঁদতে লাগল আর বলতে লাগল, হে তান্ত্রিকবাবা দয়া করে আমাকে বাঁচান।
তান্ত্রিকবাবা  অনিককে অভয় দিয়ে সমস্থ ঘটনা খোলে বলার আদেশ করলেন।
অনিক ইচ্ছে পূরণের বাসনা থেকে তার বর্তমান পরিস্থিতি পর্যন্ত সমস্থ ঘটনা বিশদভাবে বর্ণনা করল।
সবকিছু শুনে তান্ত্রিক অনিকের দিকে  তাকিয়ে গম্ভীরভাবে বললো,
তোমাকে আমি বারংবার সতর্ক করে বলেছিলাম অপার্থিব বা এমন কিছু পাওয়ার ইচ্ছাপোষন করিও না যার যোগ্য তুমি নও।
আর তুমি কি করলে?
এমন একজন প্রেমিকাকে কামনা করলে যে কিনা পৃথীবীতে পর্যন্ত নেই।সে জন্যেই তোমার স্বপ্নরাজ্যের রাণীর সাথে তোমার সাক্ষাৎয়ের বিনিময় মূল্য হিসেবে সে তোমার জীবনীশক্তি নাশ করেছে।যতবড় লালসা, ততবড় মূল্য তো দিতেই হবে।
অনিকের বাবা -মা ঘটনাটা শুনে তান্ত্রিকবাবার পায়ে পড়ে মিনতি করে  বলতে লাগল,
দয়া করে আমার ছেলেকে ভাল করে দিন।ভাইয়ের শোকে ছোট বোনটার মুখের হাসি যেন বিলিন হয়ে গেছে এবং সেও ঠিকমতো খায় না ঘুমায় না।
এসব শুনে তান্ত্রিকবাবার হৃদয়ে দয়ার ভাব উদয় হল।
তিনি অনিককে উদ্দেশ্য করে বলল,
তোমার কাছে যদি আবার ইচ্ছা পূরণের  সুযোগ আসে, তাহলে তুমি কি চাইবে?
অনিক অস্পষ্টভাবে উত্তর দিল,আমি আমার মা-বাবা এবং বোনের হাসি ফেরত চাই।এতেই আমার স্বর্গের ন্যায় সুখ প্রাপ্তি হবে।
তান্ত্রিকবাবা তৃপ্তির হাসি হেসে বলল,
বৎস অনিক তোমার এই পূণ্য ইচ্ছা অবশ্যই পূরণ হবে।আমি আমার বীজ মন্ত্র ফিরিয়ে নিচ্ছি।কাল থেকে তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবে।
আর শুনে রাখো, এরকম কিছু পাওয়ার চেষ্টা করিও না
যার যোগ্য তুমি নও।
একথা বলেই  তান্ত্রিকবাবা চলে গেলেন।
ঠিক পরের দিন  অনিক অনুভব করল সে  আগের মতই হয়ে গেছে।সাতাশ্রীর সমগ্র স্মৃতির বিস্মৃতি ঘটেছে এবং তার স্বাভাবিক ঘুম হয়েছে।
পরিশেষে অনিক বুঝতে পারল যে, স্বাভাবিক অবস্থায় সুখ-দুঃখের মাধ্যমে সকলকে নিয়ে বসবাস করার মধ্যেই মানবজীবনের সার্থকতা নিহিত এবং এর মাধ্যমেই কেবল চিরস্থায়ী সুখের সন্ধান পাওয়া সম্ভব।

গল্পটি সমাপ্ত হলো।ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
(পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ♥)

No comments

Powered by Blogger.