Header Ads

বিয়ের ফাঁদ ----লিংকন ভদ্র

বিবাহ হল এমন এক ধরনের সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি যার মাধ্যমে দু'জন মানুষের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
ইচ্ছে থাকুক আর নাই বা থাকুক বাংলাদেশী হিসেবে বিয়ে নামক এই সম্পর্কে আমাদের প্রত্যেককে জড়াতেই হবে।প্রকৃতপক্ষে এই সম্পর্কে আমার অাবদ্ধ হই আমাদের নিজের প্রয়োজনে। কিন্তু কখনো কখনো সমাজ আর পিতা-মাতার ইচ্ছে পূরণের জন্যেও আমাদের বিয়ে করতে হয় যা  প্রত্যাশিত নয়।
 বিয়ে আর প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোর  মজা আর সাজার পরিমাণ সমানুপাতিক যা ব্যক্তি বিশেষে কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।
তবে আমি মনে করি, সময় থাকতে থাকতে  আমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকা সব ধরণের স্বাদ গ্রহন করা উচিত।
আর যে যায় বলুক না কেন, আমাদের প্রায় সবারই মনে -মনে বিয়ের প্রতি এক ধরনের  প্রবল আগ্রহ
রয়েছে যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে হ্রাস পেলেই তখনই আমরা বিয়েটা করি।বিশেষ করে বাংলাদেশী ভদ্র ছেলেদের যৌবনের সোনালী মুহূর্তগুলো কেটে যায় চাকরির পেছনে ছুটতে ছুটতে যা কখনোই কাম্য নয়।
এত কথা আর না বলি।
আসুন এবার আমরা মূল গল্পে প্রবেশ করি।আমার এই গল্পের নায়ক ভবতোষ চক্রবর্তী। সে বছর-চারেক আগে স্নাতকোত্তর শেষ করেছে।বর্তমানে সে মোটামোটি ভালই একটি চাকরি করছেন।এছাড়াও সে আরও ভাল একটি চাকরি পাওয়ার জন্যে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।বয়স ২৯-৩০ এর কাছাকাছি হবে হয়ত কিন্তু সার্টিফিকেট অনুযায়ী মাত্র ২৮ বছর।সে তার জীবনের এমন একটি ধাপে অবস্থান করছে যে,যেখানে থাকার কারণে তার চোখে আর মনে নতুন করে রঙিন স্বপ্নেরা আর  খেলা করে না বরং পূর্বের লালিত স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে রূপদানের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।এখন তার মন আগের মত অশান্ত আর অবাধ্য নয় বরং যথেষ্ট শান্ত এবং স্থবির।
অপরদিকে ভবতোষের পিতামতার  শুধু একটিই ভাবনা, আর সেটা হল তার ছেলেকে বিয়ে করাবে।তারা ভবতোষের জন্যে একটি মেয়েও দেখে রেখেছেন।বিয়েও মোটামোটি ঠিক করে ফেলেছেন।হয়ত সামনের মাসেই ভবতোষের বিয়ে।
এদিকে ভবতোষ থাকে ঢাকাতে। সে এসবের কিছুই জানে না।তার ছোটবোন একদিন প্রভাতে তাকে ফোন করে জানালো যে, দাদা তোমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
ভবতোষ বোনকে কিছু বলল না। সে ভাবল যযে,আদরের ছোটবোন তো, তাই মজা করে।
 এদিকে আবার  তার মা তাকে ফোন করে অতি দ্রুত বাড়িতে আসার তাগিদ দিয়েছেন।
ভবতোষ এতকিছু না ভেবে, বাড়িতে আসল এবং জানতে পারল যে,তার ছোট বোনের কথাই ঠিক।তার অজান্তেই বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
এসব শুনে ভবতোষের প্রচন্ড রাগ হল এবং সে তার মায়ের কাছে এসে বলল, তোমরা এরকমটা কেমনে করতে পারলে?
মা বলল:আমারা তোর মাতা-পিতা আমাদের এটুকু অধিকার তো আছেই।কিসে তোর ভাল হবে আর কিসে তোর মন্দ হবে সেসব দেখা তো আমাদেরই দায়িত্ব,তাই নয় কি?
ভাবতোষ: তাই বলে আমার জীবনের এত বড় সিদ্ধান্ত আমাকে না জানিয়েই নিয়ে নিলে! এটা কখনোই কাম্য নয়। কারণ ধরিত্রীর প্রতিটি মানুষের তার জীবনসাথী নির্বাচনের অধিকার রয়েছে।আর প্রতিটি মানুষ স্বাধীন আর তাদের পছন্দের মধ্যে ভিন্নতা থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।
ভবতোষের এসব কথা শুনে মায়ের মুখে অভিমানের ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
মা :আমার বিয়ের সময়ও তো তোর বাবা আমায় দেখেনি।তাই বলে কি তোর বাবা আমায় অপছন্দ করে নাকি।
ভবতোষ:ওগো আমার প্রিয় জননী, তোমার বিয়ের সময় সামাজিক অবস্থা ছিল ভিন্ন যা তোমাদের পছন্দের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করেছে যা সভ্য সমাজে কাম্য নয়।আমি তোমার পুত্র হলেও প্রকৃতপক্ষে আমিও একটি অালাদা সত্তা যার পছন্দ, অভিরুচি ভিন্ন হবে এবং তা তোমাদের মেনে নিতে হবে।
মা অভিমানের স্বরে বলল:বুঝেছি তোর তো পাখা উঠে গেছে, আমরা এখন তোর কেউ না।
ভবতোষ :ওগো আমার অমরাবতীর চেয়েও শ্রেষ্ঠ নীড়, তুমিই আমার সব। তোমার মলিন মুখ আমার মন খারাপের প্রধান কারণ। তোমার মনের খুশিই আমার  ভাল থাকার জন্য যথেষ্ট।
মা: আমার কথা যদি এতই  ভাবিস, তাহলে মেয়েটিকে দেখে অায় একবার।
ভবতোষ :হে আমার ভূলোকের দেবী,  তুমি বললে তো আমি হাসিমুখে  নরকে যেতেও রাজী হয়ে যাব।এ তো শুধু মেয়ে দেখা। অবশ্যই দেখতে যাব।
মা মৃদু হেসে বলল :যতসব অলক্ষুণে কথাবার্তা।
এই বয়সে ভবতোষের মনে বিয়ে নিয়ে খুব একটা উচ্ছ্বাস নেই।তাই সে একাই মেয়ে দেখতে  চলে গেল।
মেয়ের অাত্মীয়স্বজনেরা জিজ্ঞেস করল,আপনি একা আসলেন যে?
ভাবতোষ: আমি ছাড়া বাড়ির সবাই মেয়েকে দেখেছে।তাই একাই আসলাম।আর শুনুন যদি সম্ভব হয় মেয়ের সাথে আমি একটু একা কথা বলতে চাই। আর মেয়েকে সাজতে হবে না।যেমন আছে তেমনই থাকুক।
প্রথমে কয়েকজন বয়স্ক লোক এই প্রস্তাবে রাজী না হলেও পরে বাড়ির মহিলাদের পীড়াপিড়িতে রাজী হলেন।
মেয়ের ছোটবোন ভবতোষকে নিয়ে মেয়ের রুমে দিয়ে আসল।
মেয়েটি কাচুমাচু হয়ে ঘরের এককোণে বসে আছে।
মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে ভবতোষ বলল,এই যে শুনছেন?
মেয়েটি হালকা মাথা উঁচু করে ভবতোষ কে দেখল এবং আবার মাথা নামিয়ে নিল।
ভবতোষ বলল:আমি ভবতোষ চক্রবর্তী।
মেয়েটি মৃদৃ স্বরে জবাব দিল:আমি জানি । কারণ ফেইসবুকে আপনাকে দেখেছি।
মেয়েটি: আমি নিলীমা।
ভবতোষ:পড়াশোনা কতটুকু করেছ?
নিলীমা : এইত সামনে এইছএসসি পরীক্ষা  দিব।
এই প্রথমবারের মতো ভবতোষ মেয়েটিকে দেখল।মেয়েকে দেখে সে কিছুক্ষণের জন্য  স্তব্ধ হয়ে গেল।এক কথায় অসাধারণ।মনে মনে সে বাবা- মায়ের পছন্দের তারিফ করতে লাগল। আজ নিলীমা নীল শাড়ী  পড়েছে।তার দৃষ্টিতে কেন জানি নীল শাড়িতে সুন্দরী মেয়েদের আরও বেশী সুন্দর দেখায় আর এক অসম্ভব মাদকতা সৃষ্টি করে যা থেকে বের হওয়া দুরূহ কাজ।
মেয়েটির মায়াভরা হাসি,  নিষ্পাপ মুখ আর মধুর থেকে মধুরতম কণ্ঠের মিষ্টি কথার প্রেমে যে কোন পুরুষ পড়তে বাধ্য।ভবতোষও তার ব্যতিক্রম নয়।সে অল্প সময়ের জন্যে হলেও যে নিলীমার প্রেমে পড়েছে সেকথা সে অস্বীকার করতে পারবে না।কিন্তু  ভবতোষ চায় না মেয়েটির সাথে দীর্ঘাস্থায়ী সম্পর্কে জড়াতে।কারণ তার বয়স অনেক কম। তাকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। স্বাধীনভাবে বাঁচার পথ বের করতে হবে।সংসার নামের কঠিন ধাঁধাঁর মারপ্যাচে পড়ে সে হারিয়ে ফেলতে পারে তার নিজস্বতা। সে নিলীমার জীবনের সফলতার প্রবৃদ্ধির পথে কঁটা হতে পারে না।
ভবতোষ:নিলীমা তুমি কি সত্যিই আমায় পছন্দ কর?
নিলীমা:মাথা নেড়ে  সম্মতিসূচক ইশারা দিল।
ভবতোষ:তুমি কি জানো আমার বয়স কত?
নিলীমা: জানি ২৮ বছর।
ভবতোষ :তুমি তো আমার থেকে অনেক ছোট।
নিলীমা :জানি।মা বলেছেন, ছেলেদের একটু বয়স হলে সমস্যা হয় না।
ভবতোষ :সমস্যা আছে।অনেক জটিল সমস্যা।তুমি তো
ছোট মানুষ তো তাই বুঝতে পারতেছ না।
নিলীমা :আমাকে ছোট মানুষ বলবেন না।আমি আপনার অর্ধাঙ্গিনী  হতে চলেছি।
ভবতোষ একগাল হেসে জবাব দিল :আচ্ছা ঠিক আছে।
এবার মন দিয়ে শুনো, তোমার হিতের জন্যে একটা কথা বলি।তুমি তোমার বাড়ির বড়দের বলে দিও যে,আমাকে তোমার পছন্দ হয় নি। আসলে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই না।তুমি এতটাই সুন্দরী যে তোমাকে অপছন্দ হওয়ার তো কোনো  কারণ নেই। তাই আমার মা বাবা বিয়ে করিয়েই ছাড়বেন।
এসব শুনে নিলীমা কাঁদতে শুরু করলেন।
তখনই ভবতোষ প্রস্তান করলেন।এবং মনে মনে বলতে লাগলেন মনে হচ্ছে কাজ হয়েছে।আমি এখন বিয়ের ফাঁদ থেকে কিছুদিন দূরে থাকতে পারব।
এদিকে বাড়িতে এসে অন্য কান্ড দেখতে পেল,,বাড়িতে যে উৎসবের পরিবেশ বিরাজ করছে।
ভবতোষ তার মা কে জিজ্ঞেস, করল কি হয়েছে মা?
মা:নিলীমা ফোন করেছিল।সে বলেছে তুই নাকি তাকে পছন্দ করেছিস আর মনে মনে সে কেবল তোকেই  স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছে।আর তুই নাকি বলেছিস,
নিলীমা, তুমি এতটাই সুন্দরী যে তোমাকে অপছন্দ হওয়ার তো কোনো  কারণ নেই।
এসব শুনে ভবতোষের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।মেয়েটকে বোঝালাম কি আর সে বুঝল কি!

কয়েকদিন পর যথা সময়ে পূণ্য তিথিতে তাদের বিয়ে হয়ে গেল।
বিয়ে ৬ মাস কেটে গেল।এখন নিলীমা বুঝতে পারল তারা কেউ কারো জন্যে নয়।  এখন তারা কেউই সুখী নয়।
কিন্তু কেন?
এর উত্তর ২য় পর্বে প্রকাশিত হবে।

No comments

Powered by Blogger.