Header Ads

ক্ষমতার নেশা ---লিংকন ভদ্র


আপনারা কেউ কেউ হয়ত জানেন আমি হলাম একজন স্বঘোষিত  সত্যানুসন্ধিৎসু আধুনিক সন্ন্যাসী। এই প্রকারের সন্ন্যাসী হওয়ার কারণ কি এবং এর তাৎপর্য সম্পর্কে আমি এখনি বলতে চাইছি না।

তবে এটা জেনে রাখুন আমার একজন গুরুদেব আছেন।উনার নাম প্রকাশ করা নিষেধ।
আমার মনে জন্ম নেওয়া সকল প্রশ্নের উত্তর আমি উনার কাছ থেকে জানার চেষ্টা করি।একদিন সকালে  গ্রামের একটি নির্জন খোলা মাঠের মধ্যে গুরুদেবের পাশে চুপ করে  বসে প্রাকৃতিক পরিবেশের স্নিগ্ধ ভালবাসাকে আলিঙ্গন করছিলাম।পৌষের  প্রভাতের মিষ্টি রোদ যখন আমাদের স্পর্শ করেছে তখন আমাদের হৃদয়ের পাশাপাশি আমাদের শরীরও যেনো আরও সতেজ এবং প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছিল।
এই সুন্দর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষের ক্ষমতার জন্যে নিজেদের প্রতি পারস্পরিক  বিদ্বেষ এর কথা চিন্তা করে হঠাৎ করে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। 
তাই গুরুদেবকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, আচ্ছা গুরুদেব, 'ক্ষমতার জন্যে পৃথিবীর মানুষের মধ্যে কুটিলতা  এবং পারস্পরিক  বিদ্বেষ কেন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে'?

গুরুদেব বলতে শুরু করলেনঃ আমি আজ যে উত্তর তোকে দিতে চলেছি তা কোনো শ্বাশত উত্তর নয়।একটি কথা মনে রাখবি যে, তথ্যের প্রবাহের সাথে সাথে আমার
উত্তর পরিবর্তন হতে পারে।আর যে বস্তুনিষ্ঠতার সাথে আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করে, থাকে আমি আমার অন্যতম শ্রেষ্ঠ শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করি।
এবার উত্তরে ফিরে যাই,
ইংরেজ জীববিজ্ঞানী  চার্লস ডারউইন বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী  প্রস্তাব করেছিলেন যে  যারা যোগ্য তারাই ঠিকে থাকবে। এর মানে হল যে জনসংখ্যা বা সম্প্রদায়ের ব্যক্তিরা উপযুক্ত তাদের বেঁচে থাকা তথা ঠিকে থাকার সম্ভাবনা বেশি (জেনেটিক্স অর্থে) এবং ধীরে ধীরে, প্রজন্ম ধরে, বৈশিষ্ট্যটি জনসংখ্যার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়বে।
এই তথ্য থেকে আমরা বলতে পারি যে,জীবজগতে ঠিকে থাকার জন্যে প্রথমে মানুষের একতাবদ্ধ হয়ে সমাজের নির্মাণ করতে হয়েছিলো। তারপর সমাজে ঠিকে থাকার জন্যে ক্ষমতার দরকার ছিলো।কারণ ক্ষমতাহীন সম্প্রদায়, হয় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে নয়ত দাসত্ব করতে হয়েছে।
কারণ সামান্য কিছু  ব্যতিক্রম বাদ দিলে, দুর্বলের উপর সবলের আধিপত্য সে এক চিরন্তন সত্য।
এটাতো বললাম বিবর্তনগত কারণ।
এখন বলবো মনস্তাত্ত্বিক এবং বৈজ্ঞানিক কারণ।
প্রথমে জানতে হবে, ডুপামিন হরমোন কি?
এটি এমন এক প্রকারের হরমোন যার প্রভাবে  যৌনতা, সুস্বাদু খাবার এবং শরীরচর্চা এসব প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যে পুরস্কার স্বরূপ আনন্দ অনুভূতির আচরণিক সাড়াদানে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।মোটকথা হলো মানুষকে সুখানুভূতি লাভ করানোর জন্যে এটিকে দায়ী করা হয়।
এই হরমোনের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আমরা বলতে পারি যে, ক্রমাগত সুখ অনুভূতি পাওয়ার জন্যে আমাদের টাকা উপার্জন করতে হবে। টাকা উপার্জন এবং বিনা পয়সায় উপরোক্ত সুবিধাসমূহ পাওয়ার সহজ সিঁড়ি হলো ক্ষমতা।
অপরদিকে,আমার ব্যাক্তিগত পর্যবেক্ষণের আলোকে আমি বলতে পারি যে,
নিজেকে অন্যের থেকে শক্তিশালী প্রমাণ,অন্যের উপর আধিপত্য, অত্যাচার,জুয়া খেলা,  এবং ধর্ষণ  করার মধ্যে এক প্রকারের পৈশাচিক আনন্দ রয়েছে। যার জন্যে ডোপামিন হরমোনের যেমন দায় রয়েছে তেমনি দায় রয়েছে আমাদের সমাজের সুখানুভূতি পাওয়ার মাধ্যমের।
মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা হলো,তার সীমিত জীবনকালে যে কোনো মূল্যে সে সর্বোচ্চ সুখের স্পর্শ পেতে চায়।
গ্রিক দার্সনিক এপিকিরাস এর  ভোগবাদ তত্ত্বে তিনি বলেছেন,  ভোগবাদ হলো এমন এক প্রকারের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অনুক্রম যেখানে মানুষকে নিয়ত ক্রমবর্ধমান পণ্য ও সেবা অধিগ্রহণকে উৎসাহিত করা হয়”। শিল্প বিপ্লবের পর থেকে বিশেষ করে ২০ শতকে ব্যাপক উৎপাদন ঠেলে দিয়েছে অতি উৎপাদনের দিকে, যেখানে পণ্যের সরবরাহ ভোক্তার চাহিদাকে অতিক্রম করে।এই মতবাদ অনুসারে মানুষের মৌল আকাঙ্ক্ষা যেহেতু অধিক পণ্য গ্রহণের মাধ্যমে সুখলাভ করা সেহেতু এ দর্শনের প্রধান কাজই হল যে কোন উপায়ে দুঃখ পরিহার করে মানুষ কি করে অধিক সুখের সন্ধান পেতে পারে তা দেখিয়ে দেওয়া।
এই দর্শনের দ্বারা মানুষ প্রভাবিত হয়ে অপ্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্যে অধিক অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতায় নেমে যায়।আমরা তো আগেই জেনেছি যে, অধিক উপার্জনের সাথে ক্ষমতার ইতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে।ফলে আমাদের অধিক উপার্জনের প্রবণতা  ক্ষমতার প্রতি নেশার আধিক্যকে বাড়িয়ে দেয়।
পরিশেষে আমি বলতে চাই, প্রতিটি মানুষের কোনো না কোনো নেশা অবশ্যই আছে।নেশা ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারবে না।আর ক্ষমতা হলো এমন এক প্রকারের নেশা যা বাকি সকল নেশার উর্ধ্বে। কারণ ক্ষমতা একবার পেয়ে গেলে, সুখ লাভ করার সকল উপাদান সহজেই পাওয়া যায়।
ক্ষমতার নেশায় যে মানুষ  বিভোর হয়,সে মানুষ কোটি মানুষের ক্ষতি করতেও দ্বিধাবোধ করেন না।
প্রকৃতপক্ষে নেশার স্বাভাবিক ধর্মই হচ্ছে এরকম যে,সময়ের সাথে- সাথে ক্রমান্বয়ে যেকোন উপায়ে এর মাত্রা বৃদ্ধি করতে হয়। ফলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির  সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
হয়ত ঠিক এই কারণেই প্লেটো তার "রিপাবলিক " গ্রন্থে কোনো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা দার্শনিকদের হাতে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।যাদের কোনো পিছুটান নেই এবং নিজের ইন্দ্রিয়কে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা আছে।
আচ্ছা গুরুদেব এই সমস্যা থেকে উত্তরণের কি কোনো পথ নেই?
গুরুদেবঃ অবশ্যই আছে।।তবে এই প্রশ্নের উত্তর অন্য একদিন দিবো।।।


No comments

Powered by Blogger.